মহানায়কের প্রত্যাবর্তন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বাংলার মানুষ তাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে ১০ জানুয়ারী ১৯৭২। ১০ জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। শুরু বাংলার নতুন এক অভিযাত্রা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনার পর মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তাকে থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠো। দীর্ঘ নয় মাসের কারাজীবনের প্রতিটি মূহুর্ত তাকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। মহান নেতার আগমনের দিনটি এখনও বাংলার বুকে গভীর আনন্দের স্মৃতি হয়ে আছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আগমনবাঙালী জাতির জীবনে একটি বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। দীর্ঘ সংগ্রাম ,ত্যাগ-তিক্ষিা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নেবাঙালী যখন বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে লন্ডন-দিল্লী হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফেরেন। এর আগে পাকিস্তানের কারাগারে গোপনে বঙ্গবন্ধকে হত্যার সকল প্রকার আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁন। এ ঘটঁনা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাঁপ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানকে চিঠি দেন। অন্যদিকে তিনি ইউরোপের ৫টি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে বিশ্বজনমত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অনুকুলে আনতে সক্ষম হন। ফলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু জালিমদের কারাগার থেকে মুক্তি পান। পাকিস্তানের সামরিক বিমানে গোপনীয়তার সাথে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঐ বিমানে ড. কামাল হোসেন ও তার পরিবার ও সঙ্গে ছিলেন। লন্ডনের সময় তখন ভোর ৮:৩০ মিনিট, ৯ জানুয়ারী ১৯৭২ সাল। স্বদেশে ফেরার জন্য বঙ্গবন্ধু ওঠেন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেটম জেটে। বাংলাদেশ ফেরার পথে বিমানটি ভারতের দিল্লীতে ২ ঘন্টা যাত্রাবিরতিকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। লন্ডন ও দিল্লীতে তিনি পেয়েছিলেন বীরোচিত সংবর্ধনা। ৮ জানুয়ারী সকাল ৭ টায় বিবিসি’র ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রচারিত খবরে বলা হয়’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে লন্ডনে আসছেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই বিমানটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরন করবে।’
প্লেনটি বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর বঙ্গবন্ধু ভিআইপি লাউঞ্জে আসলে তাকে ব্রিটিশ বৈদেশিক দফতরের উপস্থিত কর্মকর্তাগন স্বাগত জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্যার ইয়ার মাদার ল্যান্ড উপস্থিত হয়ে জানান ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়েছেন। সকাল ৮টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ক্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসা হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) হারল্ড উইলসন বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে এসে বলেন ‘গুড মর্নি প্রেসিডেন্ট।’
বাঙালীর প্রাণপ্রিয় নেতার উপস্থিতির কথা টের পেয়ে হাজার হাজার বাঙালী হোটেল ঘিরে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে। দুপুরের দিকে এক জনাকীর্ন সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন ‘এক মূহুর্তের জন্য আমি বাংলাদেশের কথা ভুলিনি, আমি জানতাম ওরা আমাকে হত্যা করবে। আমি আপনাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাব না, কিন্তু আমার জনগন মুক্তি অর্জন করবে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ্যাওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌছানোর খবর পেয়ে পূর্বনিধারিত কর্মসূচী বাতিল করে , জরুরীভাবে তিনি দেশে অবতরন করে ১০নং ডাউনিং ষ্ট্রিটে ছুটে এসে এক নজীর বিহীন সম্মান দেখান। ইতিহাসের অমলিন থাকবে সে দৃশ্য। ঐদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ নিজে তাঁর কার্যালয়ের বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে দাড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ বঙ্গবন্ধু গাড়ী থেকে বেড়িয়ে না এলেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বাংলাদেশে ছিল অন্যরকম এক উৎসবের আনন্দ। সকাল থেকেই তেজগাঁও বিমান বন্দরের দু‘পাশে সারিবদ্ধ মানুষ।বিমান বন্দর ও রাস্তার দু‘পাশে এক মহামানবের জন্য অপেক্ষমান জনতা। অন্যরকম উত্তেজনা সবার চোখে মুখে। বাংলাদেশ বেতার থেকে ভেসে আসছে ধারাবিবরনী। বাঙালীর মহান নেতা আসছেন। লাখো মানুষের কন্ঠে ভেসে আসছে ‘ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ।
যে দেশ এবং স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সে মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন। বিমানবন্দরে অস্থায়ী সরকারের বীর সেনানীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলার আপমর জনতা অশ্রুসজল নয়নে বরন করেন ইতিহাসের মহানায়ককে। সেদিনের উৎফুল্ল জনতার কথা সংখ্যায় প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও ধারনা করা যায় যে, তেজগাঁ বিমান বন্দর হতে খোলা গাড়িতে করে রেসকোর্স ময়দানে পৌছাতে সময় লেগেছিল আড়াই ঘন্টা। সেদিনকার রেসকোর্স ময়দান ও ছিলো লোকে লোকারণ্য।
বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা ছিলো জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে,রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালী ও সহযোগীতা করেছে তাদের কী হবে, বাাংলাদেশকে বর্হিবিশ্ব স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ, কৃষক,শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা। তিনি ডাক দিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত মন্ত্রমুগ্ধ জনতা দু’হাত তুলে সে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
যাদের প্রাণের ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধু ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘স্মরণ করি আমার বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সিপাই, পুলিশ, জনগণকে, হিন্দু, মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমি আপনাদের কাছে দু’একটা কথা বলতে চাই।’
তিনি বলেন আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না, যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মা বোনেরা ইজ্জত ও কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না, যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেনী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।
তিনি বীরদর্পে দেশের উন্নয়নের ডাক দিলেন, ‘যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন , আমি সমস্ত জনগনকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, নিজেরা রাস্তা শুরু করে দেও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই,একজন ও ঘুষ খাবেন না, আমি ক্ষমা করব না।’
রেসকোর্স ময়দানে তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ভাষণে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন,‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে
‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করনি।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমানিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালী যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্ব কবি তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালীর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।’
ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন ‘আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালী জাতকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালী আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বাঙালী জাতির প্রতি অবিচল আস্থা ছিল তাঁর। স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে সেদিন বলেছিলেন ‘এই বাংলাদেশে হবে সমাজতন্ত্র ব্যবস্থা, এই বাংলাদেশে হবে গণতন্ত্র, এই বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে তিনি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতার চোখে দেখেছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভারতের সৈন্য এদেশে দীর্ঘদিন অবস্থান করলে এ ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ও একদিন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটাও বাস্তব সত্য। আর তা আচ করতে পেরে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, ‘যারা জানতে চান আমি বলে দেবার চাই, আসার সময় দিল্লীতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। আমি আপনাদের বলতে পারি, আমি জানি তাকে। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। সে পন্ডিত নেহেরুর কন্যা, সে মতিলাল নেহেরুর ছেলের মেয়ে। তারা রাজনীতি করছে। ত্যাগ করছে। তারা আজকে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। যেদিন আমি বলব সেই দিন ভারতের সৈন্য বাংলার মাটি ছেড়ে চলে যাবে। এবং আস্তে আস্তে কিছু সৈন্য সরায়ে নিচ্ছে।’
তিনি জনগণকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি দেখায় দেবার চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালী রক্তদিতে জানে। শান্তিপূণ বাঙালী শান্তি বজায় রাখতে ও জানে।’ মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্হিবিশ্বের সমর্থনকে অকুন্ঠ চিত্তে স্বীকার করেন এ ভাষণে। পাশাপাশি তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান ভারত সরকার, সে দেশের জনগণ ও তাদের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। কৃতজ্ঞতা জানান ব্রিটেন, জার্মান, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে। আবার বঙ্গবন্ধু মার্কিন জনগনকে ধন্যবাদ জানান, সরকারকে নয়।
যুদ্ধাপরাধীদের গণবিরোধী ভ’মিকা পালন করার ফলে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর প্রতিহিংসা পরায়ণবশে অনেক সহিংস ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, ‘আজ আমার কারো বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা নাই, একটা মানুষকে তোমরা কিছু বলো না, অন্যায় যে করেছে তাকে সাজা দেবো। আইনশৃ্খংলা তোমাদের হাতে নিও না। তিনি সেদিন নতুন দেশ গড়ার নক্সা ও ভবিষত রুপরেখার কথা বলেন। পূর্ব প্রস্তুতিহীন এ সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি অনেক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।যা রাষ্ট্র ও জাতি গঠণে তাৎপর্য বহন করে। পাশাপাশি বহন করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র নায়কোচিত দুরদৃষ্টির। যদিও ভাষণটি ছিলো খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এ সংক্ষিপ্ত ভাষণেই বাঙালী জাতি ও ভবিষত বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দিতে সক্ষম হন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ অনুরাগীর ভালবাসায় সিক্ত হন। প্রাণ ভরে বিজয়ের পূর্ণস্বাদ গ্রহন করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বাংলার মানুষ তখনও জানত না তাদের নয়নের মনি, মহান নেতা, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত আছেন কিনা? তাই বিজয়ের মধ্যেও মানুষের মনে ছিলো শঙ্কা ও বিষাদের ছাঁপ। এ ছাড়াও সদ্য স্বাধীন হওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পূনগর্ঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উপস্থিতি ছিলো অনিবার্য।
তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারী ছিল বাঙালীর জন্য পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের দিন। জাতির এ মহান নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি আলোকিত অধ্যায়। প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারীতে বাংলার রাজনীতির মুকুটহীন স¤্রাট সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পেয়ে বাঙালী বিজয়ের আনন্দ প্রানভরে উপভোগ করেছে। সেদিন থেকেই স্বাধীনতার অগ্রপথিক, জাতির মহানায়কের হাত ধরে প্রবেশ করে গণতন্ত্রের আলোকিত অভিযাত্রায়।
আপনার মতামত জানান