শিলাবৃষ্টি নিয়ে গুজব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল

প্রকাশিত


রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশে চান্দুর মোড় এলাকায় বৃষ্টির সময় গতকাল শনিবার বিকেলে বৃষ্টির সঙ্গে বিশাল একটি শিল পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সেই শিলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি বিশেষজ্ঞদের সাথে। তারা জানিয়েছেন এটা শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য গুজব মাত্র। যে শিলটি ছবিতে প্রদর্শন করা হয়েছে এমন আকারের শিলের অস্তিত্ব পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিল মূলত বল আকৃতির হয়ে থাকে বলে জানা যায়।



উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘ ‘শিলাটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেখেছি। তবে শিলার আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে এটা শিলা না। দেখতে মনে হচ্ছে বরফ কলে তৈরি বরফের মতো। এরপরও আমাদের প্রতিনিধি দল আসলেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।’

প্রত‍্যক্ষদর্শী মুদি দোকানদার হালিম বিশ্বাস বলেন, ‘বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির সাথে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় হঠাৎ আমার দোকানের পাশে বিশাল বড় একটি শিল পড়ে। বৃষ্টি কমার পর হাতে নিয়ে অনুমান করি ওজন হবে পাঁচ কেজি।’

দোকানদার হালিম বিশ্বাসের কথা বিশ্বাস করলেও কিছু যুক্তি ভেসে আসে। যদিও বিশাল আকৃতির শিলাটি পড়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন কোথায় পড়েছে? হালিম বিশ্বাস জানিয়েছেন তার দোকানের পাশে পাকা রাস্তায় পড়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো এতো উপর থেকে পড়েও শিলটি কেন টুকরো টুকরো হলো না? কেন আস্ত রইলো? যার ওজন ১ কেজি ২০ গ্রাম। এটা কোন ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।



তবে শিলটি পড়তে দেখেছে এমন কোন প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পাওয়া যায়নি। পথচারী অশোক কুমার শীল বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টি থামার পর এখানে এসে শুনি বড় একটি শিল পড়েছে। শিলটি দেখার পরও বিশ্বাস করতে পারছি না এত বড় শিল পড়তে পারে!’

স্থানীয় সাংবাদিক মো. আল-আমিন হোসেন বলেন, ‘এত বড় শিল আমি জীবনেও দেখি নাই। আজই প্রথম দেখলাম। বৃষ্টি শেষে প্রেসক্লাব থেকে হইচই শুনতে পাই। এসে দেখি হালিম বিশ্বাস বড় একটি শিল হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।’

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচ কেজি ওজনের শিলা পড়েছে এমন খবর আমিও পেয়েছি। তবে এটার সত্যতা এখনো পাইনি।’

শিল নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বিভিন্ন ধরণের বৃষ্টিপাতের পতন ঘটতে পারে এবং প্রত্যেকেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে কিছু হিসাবে বিশ্লেষণ করেছি তুষার এবং স্লিট। শিলাবৃষ্টি হ’ল ছোট বরফের বল যা শক্তভাবে পড়ে এবং শহর এবং ফসলের ক্ষতি করে এবং সাধারণত অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। এটি বরফের একটি ছোট শিলাবৃষ্টি যা ঝরনা আকারে পড়ে। এটি সাধারণত বছরের যে কোনও সময় ঘটে এবং হিংস্রভাবে পড়ে। এই দানাগুলি বা বরফের বলগুলি বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার অস্তিত্বের কারণে একটি শক্ত বৃষ্টিপাত।

এগুলি হ’ল সম্পূর্ণ বরফের টুকরো যা আকাশ থেকে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে, বরফের বিশাল বলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা তারা বলেছিল অ্যারোলাইট। তবে এটি এই বিষয়টিতে প্রবেশ করে না, কারণ এর অস্তিত্ব সন্দেহজনক এবং এটি একটি আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনার চেয়ে রসিকতার ফলাফল হতে পারে।

এটি কীভাবে গঠিত হয়
আমরা এখন বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি যে শিলাবৃষ্টি কীভাবে তৈরি হয় যাতে মেঘের মধ্যে এই বরফের বলগুলি তৈরি হয়। শিলাবৃষ্টি সাধারণত তীব্র ঝড়ের সাথে থাকে। শিলাবৃষ্টি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মেঘগুলি হলো কমুলনিম্বাস মেঘ। এই কামুলোনিমাসের মেঘও খুব বেশি এগুলি বৃষ্টির মেঘ বা ঝড়ের মেঘ হিসাবে পরিচিত। বায়ু ভর যখন উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিবেশগত তাপীয় গ্রেডিয়েন্টের ফলস্বরূপ এটি তাপমাত্রায় একটি ড্রপ হয়ে যায়। যেমনটি আমরা জানি, তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মতো উচ্চতায়ও হ্রাস পেতে শুরু করে। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নীচে এমন অঞ্চলে পৌঁছে গেলে তা মেঘের আকারের জলের ছোট ছোট ফোঁটাগুলিতে ঘন হতে শুরু করে।

যদি মেঘগুলি উল্লম্বভাবে বিকাশ করে তবে এই কণাগুলির একটি বৃহত পরিমাণে সংরক্ষণ করা সম্ভব বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতা তৈরি করে যা সম্ভবত একটি ঝড়কে মুক্ত করে। মেঘের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা যখন খুব কম থাকে, কেবল পানির ফোঁটাও তৈরি হয় না, বরং বরফের ফোটা তৈরি হয়। এটি গঠনের জন্য, হাইড্রোস্কোপিক ঘনীভবন নিউক্লিয়াস যেমন ধূলিকণা, বালির অবশেষ, দূষণকারী কণা বা অন্যান্য গ্যাসগুলি প্রয়োজন।

যদি বরফের বলের পরিমাণ বাড়ন্ত বাতাসের ওজনকে ছাড়িয়ে যায়, তবে এটি তার ওজনের নিচে সহিংসতা বর্ষণ করবে।

শিলাবৃষ্টি ধীরে ধীরে মেঘে মেলে। উষ্ণ বায়ু শীতল অংশ এবং কনডেন্সগুলি পূরণ করে একটি উর্ধ্বমুখী বায়ু প্রবাহিত হয় এবং উষ্ণতর বিকাশমান মেঘের গঠন আরও অব্যাহত রাখায় এটি ভাসমান থাকতে সক্ষম হয়। এভাবেই মেঘ আরও বড়ো হয়ে ওঠে। যখন শিলাবৃষ্টি ভারী হয়ে যায় যখন খসড়াটির প্রতিরোধকে কাটিয়ে উঠতে পারে তখন তা বৃষ্টিপাতের অবসান হয়।

শিলাবৃষ্টি হওয়ার অন্য উপায়টি হ’ল আপডেট ক্র্যাফটি ধীর হয়ে যায় এবং মেঘে ভাসতে কোনও প্রতিরোধ না থাকে। শিলাবৃষ্টি বেশ ভারী এবং এটি শূন্যতার মধ্যে পড়লে এটি মাটিতে না পৌঁছা পর্যন্ত আরও বেশি শক্তি অর্জন করে। মেঘে যে পরিমাণ বরফ বল তৈরি হয়েছে তার উপর নির্ভর করে আমরা আরও বেশি হিংস্র এবং স্থায়ী বৃষ্টিপাত বা তার চেয়ে কম খুঁজে পাব।

শিলাবৃষ্টি বলের আকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিছু খুব ছোট এবং মেঘে সরানো সক্ষম। যতগুলি আরও গঠিত হয় বা তাপমাত্রা হ্রাস অব্যাহত থাকে, তুষারগুলি ঘন ঘন নিউক্লিয়াসের কাছে যাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমন শিলাবৃষ্টি রয়েছে যা বেশ কয়েকটি সেন্টিমিটার ব্যাস পরিমাপ করতে পারে এবং এটিই প্রথম পড়ে যায়। এই কারণে, সাধারণত যখন শিলাবৃষ্টি শুরু হয়, যখন আমরা সবচেয়ে বড় শিলাবৃষ্টি দেখি এবং সেগুলিই আমাদের উপর সবচেয়ে বেশি চাপিয়ে দেয়। শিলাবৃষ্টি বৃষ্টিপাত চলতে থাকায় আকার হ্রাস পায়।

আপনার মতামত জানান