আরেকজন সিরাজদৌলার পতন চায় কম্পানী

প্রকাশিত

নবাব সিরাজদৌলার কথা আমাদের মনে থাকার কথা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানী যখন নবাব সিরাজদৌলার প্রতিরোধের মুখে নিরিহ মানুষের জমি দখল ও বানিজ্যে সুবিধা করতে পারছিল না তখনই নবাবের দাস হিসেবে পরিচিত মীর জাফরের সাথে চুক্তি করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানী এমন একজন জগন্য চরিত্রের মানুষ খুজছিল যাকে ক্ষমতায় বসালে বিনা বাঁধায় কম্পানী সব লুটপাট করতে পারে। ক্ষমতা ও অর্থলোভী মীরজাফর নবাবের সামান্য কর্মচারী হয়েও নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চূড়ান্ত করে ফেলে।

লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়াটসন তামিলনাড়ু থেকে জাহাজযোগে সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসেন ও কোলকাতা পুনরায় দখল করেন (২জানুয়ারি,১৭৫৭)। কোম্পানির কেরানি ক্লাইভ পরে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড যুদ্ধ শুরু হলে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন। চন্দননগর দখল করার পরে সিরাজউদৌলাকে উৎখাত করার জন্য সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ও মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগত শেঠ প্রমুখদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন। সিরাজদৌলার পতন হয়। চুক্তি মতো মীরজাফর নবাব হন এবং ক্লাইভ নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা ও চব্বিশ পরগনার জায়গিরদারি লাভ করেন। জায়গির থেকে ক্লাইভের বছরে তিন লক্ষ টাকা আয় হত।

মীর জাফর হয়ে যান কম্পানীর হাতের পুতুল। মীর জাফরকে নবাব বানিয়েই কোম্পানির লোকেরা অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। নিরিহ কৃষকদের ঘরবাড়ি খাজনার নামে দখল ও লুণ্ঠন শুরু করে। মানুষের হাহাকার ও চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে ১৭৭০-এ (বাংলা ১১৭৬) অনাবৃষ্টি হয়। দেশে দেখা দেয় চরম বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ। কয়েক লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যান। এটাই ইতিহাসখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এরপর ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানির শাসন চলেছিল মূলত এবং মুখ্যত লাভজনক ব্যবসায়িক দৃষ্টি ও রীতিপদ্ধতিতেই। বাংলা নামের এই অঞ্চলটি ধীরে ধীরে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর সম্পূর্ণ করায়ত্ব হয় ১৮১৩ সালে। শুধুমাত্র একজন লোভী মানুষ মীর জাফর ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের লোভের কারনে বাংলার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়ে ২ শ বছর ইংরেজদের ভয়াবহ দুঃশাসন সহ্য করতে বাধ্য হয়েছিল।

বর্তমান যুগেও কিছু কিছু অঞ্চল থানা কিংবা ইউনিয়নে সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর প্রেতাত্মা আর্বিভুত হতে চাচ্ছে। তারা সবাব সিরাজদৌলার মতো দেশ প্রেমিক, সৎ মানুষদের জন্য সাধারন মানুষের জায়গা, জমি, বাড়িঘর দখল করতে না পেরে সিরাজদৌলাদের পতনের ছক একে সামনে এগুতে চাচ্ছে। তাদের পছন্দমতো লোককে ক্ষমতায় বসাতে পারলেই কেল্লা ফতে। সারা জীবন তারা গরিব অসহায় মানুষকে সর্বশান্ত করে তাদের চোখের জল বোতলে ভরে বাজারে বিক্রি করেই কোটি কোটি টাকা মুনাফা করবে।

আপনার মতামত জানান