অপূর্ণ রয়ে গেল গাওসুলের শেষ ইচ্ছা, দেখা হলো না বৃদ্ধা মা আর ছোট্ট ছেলেকে

প্রকাশিত



বার্ন ইউনিট থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে বৃদ্ধা মা আর ৬ মাসের ছেলেকে দেখার বড় সাধ ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিদগ্ধ ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৪)। সে সাধ তাঁর মিটল না। ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়েই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন এই আগুনযোদ্ধা।

শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মেডিক্যালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

গাওসুল আজমের ভগ্নিপতি বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, শনিবার দুপুরে চিকিৎসক একবার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস (লাইফ সাপোর্ট) খুলে দেন। কিছুসময় থাকার পর আবার তাঁর কষ্ট বেড়ে যায়। তখন চিকিৎসক এসে লাইফ সাপোর্ট পরিয়ে দেন। এরপর রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে আমাকে ডেকে দেন হাসপাতালের লোকজন। গিয়ে দেখি আমার ভাই আর নেই। গাওসুল আজম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগার আলীর ছেলে। বৃদ্ধা বাবা-মা ছাড়াও তাঁর ঘরে ছিল স্ত্রী ও ৬ মাসের ছেলে।

শনিবার ভোররাতে মৃত্যু হলেও কখন তাঁর মরদেহ মনিরামপুরে নিজ বাড়িতে পৌঁছাবে তা নিয়ে শঙ্কিত তাঁর পরিবার। কখন বৃদ্ধা মা শেষ বারের মতো ছেলের মুখ দেখবেন তা বলতে পারছেন না স্বজনরা।

মিজানুর রহমান বলেন, ভোররাতে তিনি মারা গেছেন। এখান থেকে শেষ কাজ সেরে গাওসুলের মরদেহ নেওয়া হবে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর ঢাকার সিদ্দিক বাজারে। সেখানে প্রথম জানাজা হয়ে কখন আনুষ্ঠানিকতা শেষে হবে। কখন আমরা তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরব তা বলতে পারছি না। এদিকে গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য গাওসুলের বাড়িতে চলছে সব প্রস্তুতি।

মিজানুর রহমান আরো বলেন, অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ছেলেকে একনজর দেখতে ব্যাকুল ছিলেন তাঁর মা আসিয়া বেগম। অনেক দূরে হওয়ায় আমরা মাকে ঢাকায় আনতে পারিনি। এখন ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে বারাবর মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। গত সপ্তাহে শনিবার রাতে অগ্নিদগ্ধ গাওসুলকে ঢাকা মেডিক্যালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে আনা হয়। শরীরের ৭০ ভাগ দগ্ধ হওয়ায় সেখানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শুরু থেকে আমি ভাইয়ের সাথে হাসপাতালে ছিলাম। হাসপাতালে মোট পাঁচবার কথা বলতে পেরেছেন তিনি। তা-ও স্পষ্ট নয়। গত শুক্রবার দুপুরে আমার সাথে শেষ কথা হয়। প্রথমে বাবা আজগার আলীর সাথে কথা বলতে চান তিনি। বাবার সাথে কথা শেষ হলে আমার কাছে বৃদ্ধা মা আসিয়া বেগম ও ৬ মাসের শিশু ছেলে সিয়াম কেমন আছেন তা জানতে চান গাওসুল। হাসপাতাল থেকে ফিরে তাঁদের দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর।

মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব কুমার বলেন, ঢাকা সদর দপ্তরে কথা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে গাওসুলের মরদেহ সেখানে পৌঁছালে প্রথম জানাজা হবে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর মরদেহ খুলনা বিভাগীয় দপ্তরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকতা সেরে গাওসুলের মরদেহ বাড়িতে আসবে।

প্রণব কুমার বলেন, আমাকে দল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা গাওসুলের মরদেহ গ্রহণসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য প্রস্তুত আছি।

৫ বছর আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন মনিরামপুরের গাওসুল আজম (২৪)। তাঁর বর্তমানে কর্মস্থল ছিল বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ। ছয়মাসের প্রেষণে (ডেপুটেশন) পাঁচ মাস আগে তিনি যোগ দেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে। গত সপ্তাহের শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহকর্মীদের সাথে সর্ব প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাওসুল আজম। সেখানে তাঁর গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও প্রাণে বেঁচে যান গাওসুল। জীবন রক্ষা পেলেও ৭০ ভাগ অগ্নিদগ্ধ শরীর নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন এ ফায়ারম্যান। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

আপনার মতামত জানান