অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনে রোগীদের চরম দুর্ভোগ

প্রকাশিত



বিশেষ প্রতিনিধি:
কয়েকদিন যাবত জ্বরে ভুগছিল নয়ন। আট বছরের সন্তান নয়নকে নিয়ে তার মা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বর্হিবিভাগের চিকিৎসক তাকে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। হাসপাতাল থেকে ঔষুধ নিয়েছেন ঠিকই কিভাবে খাওয়াবেন তা বুঝতে পারছেন না। অসহায় দরিদ্র মা তার সন্তানকে বসিয়ে রেখে এখানে ওখানে ছুটছেন ঔষুধ খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য। অনেক রোগী থাকায় চিকিৎসকের কাছেও ভিড়তে পারছেন না। অবশেষে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে ব্যবস্থাপত্রটি দেখালে তিনি ভুত দেখার মতো চমকে ওঠেন। কিছু বুঝতে না পেরে নয়নের মাকে প্রশ্ন করতে থাকেন এটা কোথা থেকে এনেছেন, কে দিয়েছে? সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপত্রের উপরে নিচে কোথাও তারিখ উল্লেখ করা নেই। প্রথম ঔষুধটির নাম মনে হয় হিস্টাসিন কোন রকমে বুঝতে পারলেও বাকি দুটি বুঝার ক্ষমতা নাই। নেই খাওয়ার নিয়মও। এ রকম একটি ব্যবস্থাপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকদের দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট হাতের লেখা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিনের। অভিযোগ উঠেছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসকদের স্পষ্টাক্ষরে পাঠোপযোগী ব্যবস্থাপত্র লিখতে বলা হলেও তা মানছেন না। অধিকাংশ চিকিৎসকের হাতে লেখা প্রায় দুর্বোধ্য। এসব প্রেসক্রিপশনের কারণে প্রতিদিন অনেক মানুষ বিড়ম্বনার শিকার হন। ভুক্তভোগী রোগী, স্বজন ও ওষুধের দোকানি অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসক হাতে লিখে যে প্রেসক্রিপশন দেন, তা ৮০ শতাংশ মানুষ ও ফার্মেসির কর্মচারীরা বুঝতে পারেন না। এতে অনেক সময় ওষুধ পাল্টে যাচ্ছে; ব্যবহারের সময় ও ধরন নিয়েও বিপত্তি ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের (আইওএম) চালানো এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে চিকিৎসকের হাতের লেখার কারণে বছরে সাত হাজার রোগী মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে স্পষ্ট অক্ষরে ‘পড়ার উপযোগী করে’ চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন লেখার নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে প্রেসক্রিপশনে রোগীর ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

চিকিৎসকের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানালেন হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা । তারা জানান, পরিচিত চিকিৎসকদের লেখা পড়ে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এবং দেখা মাত্রই বুঝতে পারি। কিন্তু অপরিচিত চিকিৎসকদের দুর্বোধ্য লেখা বুঝতে কষ্ট হয়। অনেক সময় ওষুধ দিতে পারি না’ বলেও জানান তারা।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা হক বলেন, বিষয়টি আমি সিভিস সার্জন স্যারকে অবগত করেছি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে যিনি অস্পষ্ট ব্যবস্থাপত্রটি লিখেছেন তিনি চিকিৎসক নন। তিনি উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আপনার মতামত জানান