বিলে ফেলে যাওয়া সেই মাকে নিয়ে গেলেন ছেলেরা

প্রকাশিত



তিন দিন ধরে বিলের মাঝখানে ঝোপের মধ‌্যে পড়ে ছিলেন প্রায় ৯০ বছরের এক বৃদ্ধা। পরে হাঁস পালনকারী এক তরুণ দেখতে পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে সেই বৃদ্ধাকে প্রায় আধমরা অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার পুলিশ। এক দিন পর গতকাল রবিবার সকালে ময়মনসিংহ বিভাগের সিআইডি ক্রাইমসিনের ফরেনসিক বিভাগের একটি ইউনিট ওই বৃদ্ধার আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে।

এ অবস্থায় খবর পেয়ে গতকাল রবিবার রাতে জামালপুরের বকশীগঞ্জ পাগলাপাড়া গ্রাম থেকে দুই ছেলে এসে মাকে নিয়ে যান।


তাদের দাবি, মানসিক প্রতিবন্ধী মা প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

জানা যায়, ওই বৃদ্ধা হলেন জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষ্মীদিয়া ইউনিয়নের পাগলাপাড়া এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনির উদ্দিনের স্ত্রী। গত শনিবার দুপুরে নান্দাইল থানার পুলিশ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলারর মুশুল্লী ইউনিয়নের উত্তর মুশল্লীর ভারুয়া বিল থেকে মৃতপ্রায় অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।

এলাকার লোকজন ও পুলিশের কাছে ওই বৃদ্ধা তখন বলেন, ছেলেরাই তাকে এখানে ফেলে রেখে যান।


পরে আবার ছেলেদের রক্ষায় ওই বৃদ্ধা আর মুখ খোলেননি।

ওই নির্জন বিলটির অবস্থান ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশের কিছু দূরে নান্দাইল উপজেলার মুশল্লী ইউনিয়নের উত্তর মুশল্লী এলাকায়। এমনিতেই ওই বিলে লোকজন কম যায়। তার ওপর কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজনের বিলে যাওয়া-আসা অনেক কমে গেছে।

এ অবস্থায় ফারুক মিয়া নামের এক তরুণ নিজের হাঁসের দলের খোঁজে বিলের মাঝখানে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় একটি উঁচু মাটির টিলায় ঝোপের মধ্যে পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ নারী। নড়াচড়া নেই, মশা-মাছি ও বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ শরীর ও আশপাশ ঘিরে ধরেছে। কাছে গিয়ে দেখতে পায় অস্পষ্ট শব্দ করছেন। পরক্ষণেই প্রতিবেশী রুবেল নামের এক যুবককে ডেকে এনে সেখান থেকেই নিজেদের মোবাইলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সে।

পরে নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক মো. রুবেল হোসেন একটি দল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ নিয়ে গত রবিবার কালের কণ্ঠে ‘বৃদ্ধা মাকে বিলে ফেলে এসেছিলেন ছেলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সিআইডির ক্রাইমসিনের একটি ইউনিট নান্দাইলে এসে হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধার আঙুলের ছাপ দিয়ে বৃদ্ধার ঠিকানা বের করে।

মা নান্দাইল হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি―এ খবর পেয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষ্মীদিয়া ইউনিয়নের পাগলাপাড়া গ্রাম থেকে গত রবিবার রাতে নান্দাইলে ছুটে আসেন দুই ছেলে দুদু মিয়া ও সালেক মিয়া। পরে থানার সহযোগিতায় হাসপাতালে গিয়ে মাকে চিহ্নিত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই ছেলে। এ অবস্থায় বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাকে নিয়ে যান তারা।

নান্দাইল থানর ওসির জিজ্ঞাসাবাদে বড় ছেলে দুদু মিয়া জানান, নিজেরা মাকে ফেলে যাননি। তবে তাদের সন্দেহ, তাদের মা মাঝেমধ্যে নিজ গ্রামের পাশেই মামার বাড়ি চলে যেতেন। কিন্তু মামা বা মামাতো ভাইয়েরা তা ভালো চোখে দেখতেন না। নিজেরা লুকিয়ে রেখে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাকে ফেরত দিতেন। এভাবে বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটলেও দুই মাস ধরে নিখোঁজ হওয়ার পর আর খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। দুদু মিয়ার ধারণা, সম্ভবত এ ঘটনা তারাই (মায়ের বাবার বাড়ির লোকজন) ঘটিয়েছে।

এ বিষয়ে নান্দাইল থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দুই ছেলের কাছ থেকে লিখিত রেখে বৃদ্ধাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার পরও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ওসিকে বলা হয়েছে।

আপনার মতামত জানান