স্মরণঃ অ্যালেন গিন্সবার্গ

প্রকাশিত


যে কবির কবিতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আলোড়ন তুলেছিল, তিনি অ্যালেন গিন্সবার্গ। কবিদের চোখে অন্যায়, বৈষম্য সবসময়ই বিদ্রোহী মাত্রায় উঠে আসে। তা থেকে ব্যতিক্রম নন গিন্সবার্গ ও তার কবিতা। অ্যালেন গিন্সবার্গও বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

অ্যালেন গিন্সবার্গ ১৯২৬ সালের আজকের দিনে (৩ জুন) আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি কলমকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ওপর তিনি লিখেছিলেন একটি দীর্ঘ কবিতা। কবিতাটির নাম ছিল, ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। তার সেই কবিতা সর্বকালের সেরা কবিতার একটি হয়ে আজো বেঁচে আছে। তার কবিতাটি ছুঁয়ে যায় হাজারও মানুষের হৃদয়। নিপীড়িত মানুষের হাহাকার মেশানো, যুদ্ধের বাস্তবচিত্র কবিতার অক্ষরে অক্ষরে জানান দিয়ে যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্য। তার কবিতা শুনে ও পড়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন হাজারও মানুষ। বাংলাদেশের পক্ষে একাত্ম হয়ে ওঠেন বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগণিত সাহিত্যপ্রেমিক।

তার কবিতাটির কয়েকটি লাইন এখনো অনেকের মুখে মুখে চলে আসে— ‘মিলিয়নস অফ সোলস নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান/ হোমলেস অন যশোর রোড আন্ডার গ্রে সান/ আ মিলিয়ন আর ডেড/ দ্য মিলিয়নস হু ক্যান/ ওয়াক টুওয়ার্ড ক্যালকাটা ফ্রম ইস্ট পাকিস্তান’।

কবিতার ইস্ট পাকিস্তান বা পূর্ব পাকিস্তানই হলো বর্তমান বাংলাদেশ।

অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর জন্ম রাশিয়ান-ইহুদী অভিবাসী মা-বাবার ঘরে। তারা মার্কসবাদ, নগ্নবাদ ও নারীবাদসহ সমস্ত আধুনিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। অ্যালেনের বাবা লুইস গিন্সবার্গ ছিলেন হাই স্কুল শিক্ষক ও কবি। তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতো নিউইয়র্ক টাইমস্ ম্যাগাজিনে। তিনি চাতূর্যময় শব্দ-খেলায় পারদর্শী ছিলেন। যেমন— ‘Is life worth living? It depends on the liver’ ।

মা, নাওমী গিন্সবার্গের মানসিক হাসপাতালে অবস্থান ও মৃত্যু অ্যালেনের জীবনে দারুণ রেখাপাত করে। শোকগাথা ‘Kaddish’-এ তাঁর মা-হারানোর বেদনা ধ্বনিত হয় এভাবে— ‘O mother/ what have I left out/ O mother/what have I forgotten/ O mother farewell’।

আইনশাস্ত্র পড়া ছেড়ে ইংরেজি বেছে নেন অ্যালেন। নিউজউইক ম্যাগাজিনে কাজ করেন কিছুদিন। সান ফ্রানসিসকোয় বসবাসকালে তাঁর মুক্তগদ্যের দীর্ঘ কবিতা ‘How’ সম্বন্ধে উইলিয়াম কারলোস উইলিয়ামস বলেন— ‘Ginsberg had finally found his voice’ ।

একসময় বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ও গুরু Chogyam Trungpa’র শিষ্য হলে অ্যালেনের কবিতায় ও বিশ্ব-বীক্ষণে বৌদ্ধমত দারুণ প্রভাব ফেলে।

১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন-বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হন তিনি। বব ডীলানের সাথে নানা জায়গা ভ্রমণ ক’রে বাস্তুসংস্থানের পক্ষে প্রচারণা চালান। ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট রিগানের নিকারাগুয়া নীতিরও বিপক্ষে অবস্থান নেন তিনি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন একসময়।

নিউইয়র্কের ব্রুকলীন কলেজেও পড়িয়েছেন। তাঁর ৮০০ পৃষ্ঠার ‘কবিতা সংকলন, ১৯৪৭ – ১৯৮০’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ— Kaddish and the other poems (1961); Realty Sandwiches (1963); First Blues (1975) ।

১৯৯৭ সালের ৫ এপ্রিল নিউইয়র্ক নগরীর ইস্ট ভিলেজে লিভার ক্যানসারে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর আগের দিনও বেশকিছু কবিতা লেখেন অ্যালেন।

আপনার মতামত জানান