লোক-দেখানো কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়

প্রকাশিত

কোনো কিছু করা বা না করার ইচ্ছাকে ‘নিয়ত’ বলা হয়। নিয়ত ভালো-মন্দ দুটোই হতে পারে। শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করাকে ‘ইখলাস’ বলা হয়। আর লোক-দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দশ্যে ইবাদত করাকে ‘রিয়া’ বলা হয়।

সব ধরনের আমল কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত থাকা। তাই আমল করার আগেই নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ১)

পূর্বসূরি মনীষীরা কোনো আমল করার আগে ভালোভাবে চিন্তা করতেন নিয়ত বিশুদ্ধ আছে কি না; ইখলাস আছে কি না। কেননা নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের দেহকায় ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না। তবে তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৬)

ইখলাসের মান অনুযায়ী কোরবানির সওয়াব

যার ইখলাসের মান যত বেশি তার ইবাদতের সওয়াবও তত বেশি। যে যত বেশি ইখলাসের সঙ্গে কোরবানি করবে সে তত বেশি সওয়াবের অধিকারী হবে। পশু ছোট হোক বা বড় হোক—তা দেখার বিষয় নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবু তাদের (সাহাবিদের) এক মুদ বা অর্ধ মুদ ব্যয় করার সমপরিমাণ সওয়াব হবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬৭৩) সওয়াবের এ ব্যবধানের কারণ ইখলাস।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ঈমান খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’ (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৬৪৪৩)

লোক-দেখানো কোরবানির ক্ষতি

বিশেষ কোনো লক্ষ্য ছাড়া লৌকিকতার উদ্দেশ্যে যে ইবাদতই করা হয়, তার কোনো সওয়াব নেই; বরং তা গুনাহ ও নিন্দনীয়। লোক-দেখানো কোরবানিরও কোনো সওয়াব নেই। এবং এটি গুনাহ ও নিন্দনীয়। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করি। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, তা হলো রিয়া বা লোক-দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের প্রতিদান দেবেন, সেদিন লৌকিকতাকারীদের বলবেন, দুনিয়াতে যাদের দেখাতে আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের থেকে কোনো প্রতিদান পাও কি না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)

প্রদর্শনপ্রিয় কোরবানিদাতার যে অবস্থা হবে

কিয়ামতের দিন ইখলাসবিহীন প্রদর্শনপ্রিয় কোরবানিদাতার ভয়াবহ অবস্থা হবে। প্রদর্শনপ্রিয়তার কারণে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘লোকের মধ্যে কিয়ামতের দিন প্রথম (দিকে) যাদের বিচার করা হবে তারা হবে তিন শ্রেণির লোক। প্রথমত, সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছে। তাকে আনা হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে তার নিয়ামতসমূহ স্মরণ করাবেন। সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেন, এসব নিয়ামত ভোগ করে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি যুদ্ধ করেছিলে এই জন্য—যেন বলা হয় অমুক ব্যক্তি বাহাদুর। তা বলা হয়েছে। তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে, ফলে তাকে অধঃমুখে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে…।’ (নাসায়ী, হাদিস : ৩১৩৭)

অনুরূপ আচরণ করা হবে ইখলাসবিহীন আলেম ও দানবীরের সঙ্গে। একই আচরণ করা হবে ইখলাসবিহীন অন্য আমলকারীর সঙ্গে।

রিয়ার কারণে ইবাদত ছাড়া যাবে কি?

ইবাদতে ‘প্রদর্শনপ্রিয়তার’ কারণে ইবাদত ছাড়া যাবে না। ফকিহ আবুল লাইস সমরকন্দি ‘তাম্বিহুল গাফেলিন’ কিতাবে লিখেছেন, কারো নিয়তে যদি রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা থাকে তাহলে এর কারণে ইবাদত পরিত্যাগ করা যাবে না; বরং মন থেকে রিয়া দূর করার চেষ্টা করতে হবে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, রিয়ার ভয়ে ইবাদত পরিত্যাগ করাও রিয়া। আল্লাহ সবাইকে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

সূত্রঃ  কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান