যে কারণে জিলহজ মাস সম্মানিত

প্রকাশিত

হিজরি সালের সর্বশেষ মাস জিলহজ। মহান আল্লাহ এই মাসকে সম্মানিত করেছেন। মহান আল্লাহর ঘরে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মুসলিমরা এসে জড়ো হন। এই মাসের প্রথম ১০ দিন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস। প্রথম দশ দিনে হাদিসে বর্ণিত বিশেষ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সুযোগ হয়।

১. আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ মাস : মহান আল্লাহ চার মাসকে হারাম তথা সম্মানিত মাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর অন্যতম হলো জিলহজ মাস। মহান আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারো মাস, এর মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এই সময়ে তোমরা নিজেদের ওপর জুলুম করো না। (সুরা তাওবাহ, আয়াত : ৩৬)

আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় অতিবাহিত হচ্ছে। এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিন মাস ধারাবাহিক রয়েছে। তা হলো – জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম। আর একটি মাস হলো রজব যা জুমাদা (আল উখরা) ও শাবান মাসের মধ্যে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৩১৯৭)

২. প্রথম দশ রাতের শপথ : মহান আল্লাহ জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের শপথ করে এই সময়ের মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাতের। (সুরা ফজর, আয়াত : ১-২)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) ও মুজাহিদ (রহ.)-সহ অনেক সাহাবি, তাবেয়ি ও মুফাসসিরের মতে এখানে দশ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাত বোঝানো হয়েছে। তাছাড়া আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এটিকে বিশুদ্ধ মতে বলে বর্ণনা করেছেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৩৫-৫৩৬)

৩. সবচেয়ে উত্তম সময় : হাদিসে জিলহজের প্রথম ১০ দিনতে সবচেয়ে উত্তম সময় বর্ণিত হয়েছে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহান আল্লারহ কাছে জিলহজের দশ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই।’ (সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস নং : ২৮৪২)

৪. আল্লাহর কাছে প্রিয় সময় : জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমালের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমালই উত্তম নয়। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? রাসুল (সা.) বলেছেন, জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি নিজের প্রাণ ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না তার কথা ভিন্ন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৯৬৯; আবু দাউদ, হাদিস নং : ২৪৩৮)

৫. হজের মাস : ওমরাহ বছরের যেকোনো সময় পালন করা যায়। তবে জিলহজ মাস হজ পালনের একমাত্র সময়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হজ নির্ধারিত মাসগুলোতে (অনুষ্ঠিত হবে)। অতঃপর কেউ এ মাসগুলোতে হজের ইচ্ছা করলে সে যেন হজের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না’ (বাকারা, আয়াত : ১৯৭)

আবদুল্লাহ বিন আববাস (রা.) বলেছেন, হজের নির্ধারিত মাসগুলো হলো, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। আল্লাহ এই মাসগুলো হজ পালনের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আর ওমরা সারা বছর আদায় করা যায়। উল্লিখিত মাসগুলো ছাড়া অন্য সময় হজের ইহরাম পরলে হজ হবে না।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান