মানুষের জীবনে সুদের ক্ষতিকর প্রভাব যেমন

প্রকাশিত

সুদের পার্থিব ও অপার্থিব বহু ক্ষতি আছে, যা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে সুদের জাগতিক ক্ষতি তুলে ধরা হলো—

সুদ সামাজিক, চারিত্রিক ও অর্থনৈতিক বহু ক্ষতি বহন করে। তাই কোনো যুগে সুদ বৈধ ছিল না। মানুষ পাপের আকর্ষণে সুদি কারবারে লিপ্ত হয়। সুদের কারণে বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। মানুষ কাজকর্মে অলস হয়ে যায়। সুদের জাগতিক ক্ষতি নিম্নরূপ—

১. সুদি কাজে লিপ্ত হওয়া আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করার শামিল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু যদি তা না করো (অবশিষ্ট সুদ ছেড়ে না দাও), তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৮০)

২. সুদ খেলে তাকওয়া বা খোদাভীতি দুর্বল হয়ে যায়।

৩. সুদ মানুষের আত্মায় শিরকের মতো প্রভাব ফেলে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সুদের পাপে ৭০-এর বেশি দরজা আছে। শিরকের পাপ সুদের মতো।’ (মুসনাদ বাজ্জাজ, হাদিস : ১৯৩৫)

৪. সুদ অন্তরে সম্পদের মোহ তৈরি করে। সুদখোর কম সম্পদে সন্তুষ্ট হয় না। সে আল্লাহর বিধানকে সম্মান করে না।

৫. সুদ কৃপণতা সৃষ্টি করে। সুদের প্রভাবে মানুষের অন্তরে কৃপণতা সৃষ্টি হয়।

৬. সুদ ভক্ষণ সুদখোরকে অভিশাপের যোগ্য বানায়। তাই সে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকে। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী, সুদের লেখক, বিয়ে হালালকারী (হিল্লা বিয়ে সম্পাদনকারী) ও যার জন্য হালাল করা হয়েছে, দাগ দানকারী, দাগগ্রহীতা, যারা সদকা দেয় না, তাদের সবার প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। আর তিনি বড় আওয়াজে ক্রন্দন করতে নিষেধ করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর : ১৩৬৫)

৭. সুদ অহংকার সৃষ্টির কারণ। সুদের কারণে অহমিকা এসে যায়। ফলে সম্পদ ছাড়া তার সামনে আর কোনো কিছু থাকে না।

৮. সুদপ্রথার কারণে দরিদ্র ব্যক্তি অসহায়ত্ব অনুভব করে আর সে কোনো সহযোগী পায় না। ফলে তার অন্তরে হিংসার বীজ বপন হয়।

৯. সুদের কারণে গরিব মানুষের মধ্যে পাপের প্রবণতা বাড়ে। একসময় পাপ করতে অন্তরে ভয় থাকে না।

১০. সুদের কারণে ধনীদের সম্পদ কষ্টবিহীন উপার্জিত হয়। ফলে সে অলস হয়ে যায়।

১১. সুদে উপার্জিত অর্থ হারাম। আর হারাম রিজিকের কারণে সুদখোরের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।

১২. সুদ খেলে অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘না, বরং তাদের অন্তরে মরিচা লেগেছে তার উপার্জনের কারণে।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১৪)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই শরীরে একটি মাংসের টুকরা আছে, যদি তা সুস্থ হয়, পুরো শরীর সুস্থ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়, তখন পুরো শরীর নষ্ট হয়ে যায়। আর তা হলো অন্তর।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২)

১৩. সুদ খাওয়া পবিত্র বস্তু থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ইহুদিদের অন্যায়ের কারণে আমি তাদের ওপর পবিত্র বস্তু হারাম করেছি, যা তাদের জন্য হালাল ছিল। আর তারা আল্লাহর রাস্তা থেকে অধিক হারে নিষেধ করার কারণে এবং তারা সুদ নেওয়ার কারণে। অথচ তাদের তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আর তারা মানুষের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করার কারণে (পবিত্র বস্তু হারাম করেছি)। কাফিরদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৬০-১৬১)

১৪. সুদ আসমানি শাস্তি অবতরণের কারণ।

১৫. সুদের কারণে কল্যাণের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একে অন্যকে করজে হাসানা বা নিঃশর্ত ঋণ দেয় না। সুদের জন্য গরিবকে অবকাশ দেওয়া হয় না। আর কোনো বিপদগ্রস্তের প্রতি খেয়াল করা হয় না।

১৬. সুদ সম্পদের বরকত কমায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘সুদকে আল্লাহ কমিয়ে দেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সুদ যদিও বেশি হয়, তবু এর পরিণতি কমতির দিকে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৩৭৫৪)

১৭. সুদের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। কেননা ঋণগ্রহীতা পণ্যে সুদের হারও যোগ করে।

১৮. সুদের কারণে বিশ্বের সব সম্পদ গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়।

১৯. সুদের কারণে মানুষের মজুরি বেড়ে যায় এবং পরিবহন ভাড়া বেড়ে যায়। কেননা যখন সুদ নিয়ে কোনো গাড়ি ক্রয় করে, তখন তারা সুদের মুনাফাও তাতে যোগ করে। (ফিকহুর রিবা, পৃষ্ঠা ২৫)

২০. সুদ মানুষকে অপব্যয়ের দিকে নিয়ে যায়। যারা সুদ গ্রহণ করে, তাদের ওই টাকা খরচ করতে কোনো দ্বিধা থাকে না।

মহান আল্লাহ আমাদের সুদি অর্থ থেকে হেফাজত করুন।

সূত্রঃ যুগান্তর।

আপনার মতামত জানান