পরকালে শাফাআত লাভ হবে যেসব আমলে

প্রকাশিত



শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ। কারো জন্য সুপারিশ করাকে শাফাআত বলা হয়। চাই সেটা কারো উপকারের জন্য কিংবা কাউকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য। প্রতিটি মুসলমান শাফাআত শব্দটির সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত।

সবাই নবীজি (সা.)-এর শাফাআতের আকাঙ্ক্ষা করে। নিম্নে এমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো, যেগুলো শাফাআত লাভে আবশ্যক ও সহায়ক।

একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া : শাফাআত লাভের পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া। কারণ আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার রাখে না। তাদের জন্য কোনো নবী-রাসুলরা সুপারিশ করবেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নবী ও মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৩)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ লোভ আছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠচিত্তে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। (বুখারি, হাদিস : ৯৯)

জুলুম না করা : জুলুম মহাপাপ। যারা অন্যের ওপর জুলুম করবে, মহান আল্লাহ তাদের কঠিন শাস্তি দেবেন। কিয়ামতের দিন জালিমদের জন্য কোনো সুপারিশকারী পাওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে, যখন দুঃখ-কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। জালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে—এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই। ’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ১৮)

কোরআন তিলাওয়াত : পরকালে শাফাআত লাভের কার্যকর একটি আমল হলো, বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। আবু উসামাহ আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে শাফাআতকারী হিসেবে আসবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৯)

রোজা রাখা : আবদুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সিয়াম (রোজা) এবং কোরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব, আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবুল করো। কোরআন বলবে, হে রব, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। ’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৮৩৯)

আজানের দোয়া পড়া : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে দোয়া করে,… কিয়ামতের দিন সে আমার শাফাআত লাভের অধিকারী হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৪)

মদিনাকে ভালোবাসা : মদিনার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নবীজি (সা.)-এর শাফাআত লাভের মাধ্যম। যারা মদিনাকে ভালোবেসে মদিনায় বসবাস করবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে মদিনা ছেড়ে যাবে না, নবীজি (সা.) তাদের জন্য সুপারিশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ মদিনায় দুর্ভিক্ষ ও কষ্ট-কাঠিন্য সহ্য করলে কিয়ামতের দিন তার জন্য আমি অবশ্যই সাক্ষী অথবা সুপারিশকারী হব। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯২৪)

বেশি বেশি নামাজ পড়া : রাবিআ ইবনে কাআব আসলামি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে তার অজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসতাম। একদিন তিনি আমাকে বলেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম, আমি বেহেশতে আপনার সঙ্গ কামনা করি। তিনি বলেন, এ ছাড়া অন্য কিছু কি চাও? আমি বললাম, না, এটাই। তিনি বলেন, তাহলে তুমি বেশি বেশি সিজদা করার দ্বারা তোমার এ কাজে আমাকে সহায়তা করো। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ১১৩৮)

অর্থাৎ বেশি পরিমাণে নামাজ পড়ো, এতে তোমার জন্য আমার সুপারিশ করা সহজ হবে।

সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, কোনো মুসলমান মা-বাবার সামনে তিনটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মৃত্যুবরণ করলে সন্তানদের ওপরে আল্লাহর রহমতের কারণে (আল্লাহ ওই মা-বাবাকে) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি বলেন, সন্তানদের বলা হবে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তখন তারা বলবে, আমাদের মা-বাবা জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব না। তখন তাদের বলা হবে, তোমরা এবং তোমাদের মা-বাবা জান্নাতে প্রবেশ করো। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৮৭৬)

আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শ : আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে ওঠাবসা করাও শাফাআত লাভের মাধ্যম হতে পারে। কারণ কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দারা তাদের সঙ্গীদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা (কিয়ামাতের দিন) মুমিনদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন এবং তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, তখন ঈমানদারগণ তাদের জাহান্নামি ভাইদের ব্যাপারে তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে এত প্রচণ্ড তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে যে তারা দুনিয়াতে অবস্থানকালে তাদের কেউ তার বন্ধুর পক্ষে ততটা প্রচণ্ড বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করত, সওম রাখত এবং হজ করত। অথচ আপনি তাদের জাহান্নামে দাখিল করেছেন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমরা যাও এবং তাদের মধ্যে যাদের তোমরা চিনতে পারো, তাদের বের করে নিয়ে এসো। অতএব তারা তাদের কাছে যাবে এবং তাদের আকৃতি দেখে তাদের চিনতে পারবে। জাহান্নামের আগুন তাদের দৈহিক গঠনাকৃতি ভক্ষণ (নষ্ট) করবে না। আগুন তাদের কারো পদদ্বয়ের জংঘার অর্ধাংশ পর্যন্ত এবং কারো পদদ্বয়ের গোছা পর্যন্ত স্পর্শ করবে। তারা তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে এনে বলবে, হে আমাদের প্রভু, আপনি আমাদের যাদের বের করে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাদের বের করে এনেছি। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, যাদের অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে অর্ধ দিনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তোমরা তাদেরও বের করে নিয়ে এসো। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, যার এ কথা বিশ্বাস না হয় সে যেন তিলাওয়াত করে (অনুবাদ): ‘আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। কোনো উত্তম কাজ হলে আল্লাহ তা দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন। ’ [সুরা নিসা : ৪-৪০]। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬০)

আপনার মতামত জানান