নারীরা যেভাবে কোরাবানি দেবেন

প্রকাশিত

ইবরাহিম (আ.)-এর যে ত্যাগের স্মরণে কোরবানির বিধান আরোপিত হয়েছে সেই ত্যাগের অন্যতম অংশীদার ছিলেন মা হাজেরা (আ.)। যিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য জনমানবহীন প্রান্তরে একাকী সন্তানকে লালন-পালন করে কোরবানির জন্য পিতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। শয়তানের প্রতারণা উপেক্ষা করে এবং সন্তানের প্রতি মাতৃস্নেহ পেছনে ফেলে আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পণের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সামর্থ্যবান সব নারী পশু কোরবানির মাধ্যমে তার সে ত্যাগের অনুশীলন করবেন সেটিই কাম্য।

নারী-পুরুষ সবার জন্য কোরবানি : কোরবানি একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য আছে তাদেরই কোরবানি করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো।’ (সুরা কাউসার, আয়াত : ২)

যারা নামাজ আদায়ের উপযুক্ত, তারা যেমন নামাজ আদায় করবেন, তেমনি যারা কোরবানি করার সামর্থ্য রাখেন, তারা কোরবানি করবেন। নামাজ ও কোরবানি দুটোই মহান আল্লাহর জন্যই নিবেদিত ইবাদত। আল্লাহ বলেন, ‘বলো হে রাসুল, ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬২)

কোরবানির বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে নবী (সা.) কখনো কোরবানি করা পরিহার করেননি। ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ১০ বছর মদিনায় ছিলেন, তিনি প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৭)

সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি আদায় না করা জঘন্য অপরাধ এবং চূড়ান্ত কৃপণতা। এমন ব্যক্তিদের ঈদগাহে আসাই উচিত নয় মর্মে নবী (সা.) হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছাকাছিও না হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩)

মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতে নারীর অংশগ্রহণ : কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয় আর কোনো আমল নেই। কোরবানির মাধ্যমে পরকালে দ্রুত গৃহীত ইবাদতের সওয়াব আমলনামায় যুক্ত হয়। সামর্থ্যবান নারীরা এই মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত থেকে বঞ্চিত হবে না। প্রফুল্ল মনে কোরবানির আমলে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। নবী (সা.) প্রফুল্ল মনে কোরবানি করতে বলেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তান কোরবানির দিন (পশু জবাই করে) রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয় আর কোনো আমল করে না। কিয়ামতের দিন জবাইকৃত পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়ে যায়। অতএব তোমরা কোরবানির মাধ্যমে নিজেকে প্রফুল্ল করো। অর্থাৎ প্রফুল্ল মনে কোরবানি করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)

নারীর কোরবানিতে পুরুষের সহযোগিতা : সামর্থ্যবান নারীর ওপর কোরবানি অপরিহার্য। কিন্তু স্বামী, পিতা বা পুরুষ অভিভাবকের উচিত, নারীর কোরবানির ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ সামর্থ্য থাকলেও অনেক নারীর পক্ষে কোরবানির ব্যবস্থাপনা অনেক কষ্টের হয়। নারী কোরবানি করতে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান না হলেও পুরুষ অভিভাবক নিজের কোরবানির পাশাপাশি নারীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারে। স্বামী নিজের কোরবানির পাশাপাশি স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,….আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী? লোকজন জবাব দিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২২৮)

কোরবানির সময় উপস্থিত থাকা : নারীরাও কোরবানির পশু জবাই করতে পারে। জবাই করতে না পারলে কমপক্ষে জবাই করার স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। ফাতিমা (রা.) কোরবানি করেছেন। নবী (সা.) তাঁকে কোরবানির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে ফাতিমা, ওঠো, তোমার কোরবানির পশুর কাছে যাও। কেননা তার রক্তের প্রথম ফোঁটা প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর বলো, ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাতে আমি আদিষ্ট হয়েছি আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’

বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, এটি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য নির্ধারিত, নাকি সব মুসলমানের জন্য? তিনি বলেন, ‘সব মুসলমানের জন্য’। (সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১৯১৬২; মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ৫৯৩৫)

বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক কর্মজীবী নারী আছেন, যাঁরা বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। কোরবানি করার আর্থিক সামর্থ্যও রাখেন। কর্মজীবী ছাড়াও অনেকে সামর্থ্যবান আছেন; কিন্তু স্বামী অথবা পিতার কোরবানি করাকেই যথেষ্ট মনে করেন। এভাবে অনেক নারীই কোরবানি না দিয়ে কোরবানির অফুরন্ত ফজিলত ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নারীদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং পুরুষদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। দ্বিনি কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমেই শান্তির পরিবার গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান