ঠোঁটের রোগ ও যত্নে করণীয়

প্রকাশিত

আপনি যদি দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোতে কাজ করেন অথবা কাজ করার সময় সূর্যের আলো আপনার ঠোঁটের ওপর পড়ে, তবে সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের প্রদাহ থেকে শুরু করে স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ ঠোঁটের ক্যান্সারের সময়মতো চিকিৎসা করালে রোগী খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কাজ করতে হলে অথবা বেশিক্ষণ থাকতে হলে আপনি ইচ্ছা করলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এসপিএফ-৩০ থেকে এসপিএফ-৪০ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এ কারণেই ক্রিকেট খেলার সময় অনেক খেলোয়াড়কে দেখা যায় ঠোঁটে এবং মুখে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে।

ফলিক এসিডের অভাব হলে ঠোঁট কাটা এবং তালু কাটা শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে। গর্ভবতী মায়ের ফলিক এসিড নিশ্চিত করুন। গর্ভকালীন ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবসময় খাবার থেকে ফলিক এসিড নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে। ফলিক এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে জন্মগত ত্রুটি অনেক কমে আসে।

এরপরও যদি ঠোঁট কাটা শিশু জন্ম নেয়, তবে সেক্ষেত্রে রিকনস্ট্রাকশন সার্জারির মাধ্যমে সহজেই তা ঠিক করা যায়। ঠোঁট কাটা শিশুকে কখনই অভিশপ্ত মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ এটি একটি জন্মগত ত্রুটি। এ ক্ষেত্রে শিশুর কোনো দোষ থাকতে পারে না। জেনেটিক কারণে শরীরের কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে আসলে কারও কোনো কিছু করার থাকে না।

মেয়েদের মাঝে যাদের লিপস্টিক ব্যবহারে ঠোঁটে অ্যালার্জি হয়, তাদের ক্ষেত্রে লাল রঙের লিপস্টিকের পরিবর্তে হালকা রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা উচিত। অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ সেবন করতে পারেন। রক্তের একটি পরীক্ষা করে সহজেই আপনার রোগ নির্ণয় করা যায়। নকল লিপস্টিক এবং নকল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নকল প্রসাধনী সামগ্রী আপনার ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

কিছু উচ্চরক্তচাপ নিরোধক ওষুধ সেবন করলেও ঠোঁটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং আলসার দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন করে দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কখনো ঠোঁট কামড়াবেন না। প্রিয়জনকে চুমু খাওয়ার সময় ঠোঁটে কামড় দেবেন না। এতে করে ঠোঁটে বিরল ধরনের প্রদাহজনিত রোগ দেখা দিতে পারে, যা ভালো হতে সময় লাগে। প্রচণ্ড গরম এবং ঠান্ডায় আপনার ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। ঠোঁট ফেটে গেলে ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া গ্লিসারিনও ব্যবহার করা যায়।

অযথা ঠোঁট কামড়ানো এবং ঠোঁট চোষার ক্ষেত্রে ঠোঁটের প্রদাহজনিত রোগগুলোর একটি হলো এক্সফলিয়েটিভ চিলাইটিস। চিলাইটিস বলতে ঠোঁটের প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া বোঝায়। এ রোগের ক্ষেত্রে ঠোঁটের ওপরের চামড়া বা মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যায় এবং উঠে যায়। স্থানটি ক্ষতস্থানের মতো দেখা যায়। ক্ষতস্থান শুকানোর পর রোগী মনে করে সুস্থ হয়ে উঠছে। ঠিক এমন সময় আবার ঠোঁটের চামড়া উঠতে থাকে। এ কারণেই কখনই ঠোঁট কামড়াবেন না অথবা ঠোঁট চুষবেন না। এ রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ স্টেরয়েড ক্রিম নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া গ্লিসারিন বোরাক্স এক্সফলিয়েটিভ চিলাইটিস বা ঠোঁটের প্রদাহের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। এন্টি ফাঙ্গাল ওষুধ সেবন করা যায়। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। ভিটামিন ডি সেবন করা যেতে পারে। সবকিছু নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের ওপর।

মেয়েদের মধ্যে যারা গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করেন তারা ঘুমানোর আগে লিপস্টিক উঠিয়ে নেবেন। অন্যথায় ঠোঁটে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যাবে। তখন আপনার ঠোঁট দেখতে ভালো লাগবে না। ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঠোঁট কালো হতে পারে অথবা গাঢ় রঙের হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ২ শতাংশ হাইড্রোকুইনন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি এফডিএ কর্তৃক অনুমোদিত।

যাদের ঠোঁট অধিকাংশ সময় শুষ্ক থাকে তারা ইচ্ছা করলে প্রাকৃতিক মধু ঠোঁটের ওপর প্রয়োগ করতে পারেন। মধু ঠোঁটের দাগ কিছুটা হলেও দূর করে। মধু রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় প্রয়োগ করতে হবে। সকালবেলা ঠোঁট ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ঠোঁট কখনো ফুলে গেলে অথবা ঠোঁটে পানি এলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে দেরি হলে এন্টি অ্যালার্জিক ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডেজলোরাটিডিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এর সঙ্গে স্টেরয়েড প্রয়োজন হতে পারে।

সবার একটি কথা মনে রাখতে হবে, ঠোঁটের নিচে কোনো ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ড থাকে না। এ কারণেই ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে শীতকালে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হয়। ভিটামিন বি২ অথবা রিবোফ্লাভিনের অভাব হলে ঠোঁটের কোনায় ঘা হতে পারে। হারপিস ভাইরাসের কারণে ও ঠোঁটে আলসার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ক্রিম প্রয়োগ করা প্রয়োজন হতে পারে।

ঠোঁট ও জিহ্বা যদি নীল হয়ে যায়, ধারণা করতে হবে আপনার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। বর্তমান মহামারি চলাকালীন ঠোঁট বা জিহ্বা সামান্য নীল হলে যত দ্রুত সম্ভব পালস্ অক্সিমিটার দিয়ে দেখে নিতে হবে আপনার রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের পরিমাণ কত? স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ঠোঁট একটি স্পর্শকাতর অংশ। ঠোঁটের যথাযথ যত্ন নিতে হবে এবং ঠোঁটের অসুখে অবহেলা করা যাবে না।

সূত্রঃ যুগান্তর

আপনার মতামত জানান