ছেলের ফেলে যাওয়া মায়ের করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি

প্রকাশিত



নিজস্ব প্রতিবেদক >>
সাভারে করোনা ভাইরাস সন্দেহে ফেলে যাওয়া সেই নারী (৭৫) করোনায় আক্রান্ত নন। আইপিএইচ এর প্রাথমিক পরীক্ষায় ওই নারীর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাভার উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হুদা মিঠু।

করোনা আক্রান্ত এমন সন্দেহে অসহায় এক মাকে ফেলে রেখে গেছেন তার পেটের সন্তানেরা। আমরা আতঙ্কে আছি। আপনারা দ্রুত এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে ১৮ এপ্রিল শনিবার রাতে এমন ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ী এলাকায় ছুটে গিয়েছিলেন সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।

পরম যত্ন আর মমতা নিয়ে ওই নারীকে মা সম্বোধন করে ব্যক্তিগতভাবে তার সকল দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।

সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা এর আগে জানিয়েছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী আজ থেকে এই মায়ের সন্তান। এরপর থেকেই অসংখ্য সন্তানের মা হয়ে যান ওই নারী।

বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে, প্রশংসায় ভাসতে থাকেন ওই ম্যাজিস্ট্রেট। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে সিক্ত হন তিনি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ম্যাজিস্ট্রেটের মা
অসহায় নারীকে ওই ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ওই রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় ৫০ শয্যার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ)।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে আছেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।

দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে এখন হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম সামলাচ্ছেন ডা. নাজমুল হুদা মিঠু।

তিনি জানান, মা এখন আগের চাইতে অনেক সুস্থ আছেন। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করছেন। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসায় দু’একদিনের মধ্যেই আমরা তাকে অন্তঃবিভাগে স্থানান্তর করবো।

মায়ের নমুনার সঙ্গে আরও ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে তা ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ) পাঠানো হয়েছিল। জেনে খুশি হবেন, প্রত্যেকের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ।

হাজার প্রশ্ন করলেও ‘মা কোনো কথার উত্তর দিচ্ছেন না। তিনি বাকপ্রতিবন্ধীও নন। সম্ভবত সন্তানদের পরিচয় আড়াল করতেই তিনি কথার উত্তর দিচ্ছেন না।এই ভয়ে আছেন সন্তানদের সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। আমরাও তাকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে এ বিষয়ে খুব প্রশ্নও করছি না।

হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বিশেষভাবে মায়ের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখছেন। ঠিকমতো সেবা-শুশ্রূষা করছেন। তিনি যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, সে বিষয়ে আমরা প্রত্যয়নপত্র দিয়ে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

অবশ্য পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেই সার্বক্ষণিক মায়ের খোঁজ খবর রাখছেন সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।

এছাড়াও সমাজ সেবা বিভাগ থেকেও আমাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে যোগ করেন সাভার উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হুদা মিঠু।

সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, গত তিনদিনেও এই মায়ের খোঁজ নিতে সন্তান কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কেউ আসেননি। এমনকি আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেননি।

আমি আগেই বলেছি তিনি আমার মা। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের সামর্থের সবটুকু দিয়েই আমি মায়ের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশাল্লহ- যোগ করেন সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।

আপনার মতামত জানান