ম্যাজিস্ট্রেটের ইচ্ছা! ‘কারণ ছাড়াই’ ৯ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার

প্রকাশিত



পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে ৯ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল রহমান।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার জেলার গলাচিপায় এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পরপরই খারিজ্জামা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল রহমান। এ সময় তিনি ৯ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন।

বহিষ্কৃতরা হলো- গুয়াবাড়িয়া এবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোসা. লিয়া আক্তার (রোল নং-২৩৩২৭৬) ও মোসা. সুমাইয়া আক্তার (রোল নং-২৩৩২৭৫), কল্যাণকলস বিদ্যালয়ের শিরিন আক্তার (২৩৩২২৬) ও মোসা. ইমা আক্তার (১১৩৮৯৪), মধ্য হরিদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোকছেদুল মোল্লা (২২৩২১৩), খারিজ্জামা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মো. সোয়েব সরদার (২২৩১২৭), লামনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মো. নয়ন হোসেন (১১৩৮৭১), মধ্য ধরান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাদিয়া (১১৩৯১১) ও ভুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাইদুল (২২৩৩৮৩)।

এ ঘটনায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। করোনার প্রকোপে পিছিয়ে পড়া এসব পরীক্ষার্থীদের প্রতি চরম অন্যায় হয়েছে বলে দাবি উঠেছে।

খারিজ্জামা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী মো. সোয়েব সরদার জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে প্রশ্নপত্র ও খাতা বিতরণ করা হয়। খাতায় লেখা শুরুর মুহূর্তে ম্যাজিস্ট্রেট হলে প্রবেশ করেন। কোনো কারণ ছাড়াই আমার খাতা নিয়ে যান। এ সময় আমি তার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করি। কিন্তু তিনি আমাকে লাথি মেরে পা সরিয়ে নেন। পরে লাইব্রেরিতে বসিয়ে রেখে পরীক্ষা শেষ হলে আমিসহ ৯ জনকে বের করে দেন। পরে জানতে পারি আমাদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

আরেক পরীক্ষার্থী মোসা. ইমা আক্তার বলেন, প্রশ্নপত্র দেওয়ার পরপরই ম্যাজিস্ট্রেট হলে হাজির হলে তাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। এতে আমার হাতে থেকে কলম নিচে পড়ে যায়। কলম উঠাতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট হল পরির্দশককে আমার খাতা নিয়ে যেতে বলেন। আমি খাতা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ধমক দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দেন। এ সময় আমি তার পা জড়িয়ে কান্নাকাটি করলেও তিনি চলে যান।

মোসা. লিয়া আক্তার বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে আমি তার দিকে একবার তাকাই। এ কারণে তিনি আমার খাতা নিয়ে যেতে বলেন। আমার কোনো অপরাধ ছিল না। হলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখার দাবি জানানো হলে ম্যাজিস্ট্রেট তা শোনেননি।

এ বিষয়ে খারিজ্জামা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও কেন্দ্র সচিব নুসরাত জাহান বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এমসিকিউ পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান পরিচয় না দিয়ে হলে উপস্থিত হন। আমরা তার উপস্থিতিতে পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নপত্র ও খাতা সরবরাহ করে আমার অফিস কক্ষে চলে আসি। দুই মিনিটের মাথায় পরীক্ষার্থীরা আমার কক্ষে আসা শুরু করে। আমি তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে পরীক্ষার্থীরা কেঁদে জানায়- ম্যাজিস্ট্রেট তাদের খাতা নিয়ে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। এরপর আমি নিজে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা অন্যের সঙ্গে কথা বলেছে এবং অন্যদিকে তাকিয়েছে। এ কারণে তাদের খাতা নেওয়া হয়েছে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় ম্যাজিস্ট্রেট আমার অফিস কক্ষে এসে মৌখিকভাবে ওই ৯ পরীক্ষার্থীকে নোটিশ করে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করতে আদেশ দেন। আমি এ সময় তার কাছে আপত্তি করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বহিষ্কার আদেশ বহাল রাখেন।

কেন্দ্রের দায়িত্বরত সহকারী সচিব মোশারেফ হোসেন বলেন, পড়ে যাওয়া কলম উঠানোর অভিযোগে বহিষ্কার করা কেমন আইন। পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়াই ৯ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল রহমান। যেসব পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে তাদের একজন এসসিকিউ উত্তরপত্রে দুটি, অন্যজন তিনটি উত্তর ভরাট করেছে। বাকি সাতজন শুধু রোল নাম্বার পূরণ করতে পেরেছে। এই যৌক্তিক কথাগুলো তার কাছে তুলে ধরলেও তিনি এক প্রকার জোর করেই বহিষ্কার করেন।

কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা বলেন, কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার নিয়ম ভঙ্গ করলে কক্ষ পরিদর্শকের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে; কিন্তু তিনি মনগড়া সিদ্ধান্তে ৯ শিক্ষার্থীর প্রতি চরম অন্যায় করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেট খাতায় লেখার দাবি করলেও বাস্তবে ওই সব পরীক্ষার্থীদের খাতায় কোনো প্রকার লেখা ছিল না। শুধু শিক্ষার্থী নয়, কেন্দ্রের অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গেও তিনি রুঢ় আচরণ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা দেখাদেখি করছিল এবং প্রশ্ন এক্সচেঞ্জ করছিল।

অনেকের খাতায় কিছু লেখা নেই এবং ৫ মিনিটের মধ্যে বহিষ্কারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা খাতায় লিখেছে এবং আরও একটু সময় বেশি হবে।

অন্যায়ভাবে ৯ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা। এ বিষয়ে বিবেচনা করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, যেটা হয়েছে তা নিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

আপনার মতামত জানান