মুজিব-ইন্ধিরা চুক্তির বাস্তবায়ন চায় তিন বিঘা করিডোরবাসী

প্রকাশিত

১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত মুজিব-ইন্ধিরা চুক্তির বাস্তবায়ন চায় লালমনিরহাটের আলোচিত তিন বিঘা করিডোরবাসী।

শুক্রবার (৬ মে) পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের তিন বিঘা করিডোরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফর উপলক্ষে এ দাবি জানিয়েছেন করিডোরের বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ বেরুবাড়ীর বিনিময়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের অধিবাসীদের ভারত-সরকার মূল ভূ-খণ্ডে নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও চলাচলের জন্য তিন বিঘা করিডোর চিরস্থায়ী ইজারা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সশস্ত্র পাহারায় চলাচলের সে স্বাধীনতা পায় না বাসিন্দারা।

এদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তিন বিঘা করিডোরে যাওয়া বিষয়ে মৌখিকভাবে জানলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে জানায়নি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনি বিএসএফ। করিডোরবাসী সরাসরি তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশি সাংবাদিকদেরও প্রবেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

আগমন উপলক্ষে চুক্তির বাস্তবায়ন করে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়েছে দহগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেতা, আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধি ও করিডোরবাসীরা। অমিত শাহকে এসব দাবি সরাসরি জানাতে প্রস্তুতি নিলেও বাংলাদেশি কারও সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি মেলেনি। এ ছাড়াও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই করিডোরের চলাচল বন্ধ করে দিয়ে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ নিয়ে দুই পাশে দীর্ঘ লাইন জমে যায় স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটকের। হুট করে এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তারা।

এ বিষয়ে বিজিবি কর্তৃপক্ষ তেমন কিছু জানতেন না বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

সীমান্ত সূত্র ও সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার সকালে বিএসএফের বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তিন বিঘা হ্যালিপ্যাড মাঠে নামেন। নেমে কোচবিহার জেলার তিন বিঘা করিডোর সড়কপথে পরিদর্শনে আসলে তাকে স্বাগত জানায় বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ সিং, ভারতের উত্তরবঙ্গের আইজি অজয় কুমার সিং, কোচবিহারের জেলা শাসক পবন কাদিয়ান, পুলিশ সুপার সুমিত কুমার। এ সময় ভারতীয় ৬ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা করিডোরের চারদিকে সামিয়ানা দিয়ে ঘিরে রাখে। করিডোরে বিএসএফের সম্মেলনকক্ষে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিজেপির রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন বিঘা করিডোর এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন। করিডোর এলাকায় তিনি একটি গাছ রোপণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, স্থানীয় সাংসদ সুকান্ত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক চলাকালীন করিডোর সড়ক চলাফেরার করার দুই দিকের গেট বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। এ সময় বাংলাদেশি কোনো গণমাধ্যম ও বিজিবিকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি বিএসএফ। দহগ্রামে প্রবেশ ও বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডে যাতায়াতের জন্য হাজারও লোকজন ভোগান্তিতে পড়ে।

দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সংগ্রাম কমিটির সেক্রেটারি রেজানুর রহমান রেজা বলেন, ১৯৭৪ সালে যে চুক্তি হয়েছিল সে চুক্তি অনুসারে বেড়ুবাড়ি এলাকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু বিনিময়ে আমরা তিন বিঘা করিডোর পাইনি। এ জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আমরা সুবিধামতো এখান দিয়ে যাতায়াত করতে পারছি না। নির্দিষ্ট পরিমাণ গৃহপালিত পশু নিয়ে যাওয়া আসা করা যায় অথচ এখানে কয়েক লাখ মানুষ কৃষি ও পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। আজকেও হঠাৎ এভাবে রাস্তা বন্ধ রাখাই তার উদাহরণ। আমরা স্বাধীনতার পূর্ণতা এখনো পাইনি।

দহগ্রাম ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রুনা লায়লা বলেন, আমিও এসেছিলাম কিছু দাবির বিষয় তুলে ধরব বলে। উলটো দীর্ঘক্ষণ রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আমাদের জিম্মি করে রাখা হলো। আমরা চাই করিডোরের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের স্বাধীনতা যা ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুসারে হবে।

দহগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের আগে থেকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। লোকমুখে শুনে এসেছি কিছু দাবি নিয়ে। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা চুক্তি অনুসারে করিডোরের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা চাই।

এ ব্যাপারে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ, রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএফএম আজমল হোসেন খান বলেন, ‘ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসবেন এটা আমাদের ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দীর্ঘসময় বন্ধের বিষয়টি আমরা বিএসএফের কাছে জানতে চাইব। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

সুত্র: ঢাকাপ্রকাশ

আপনার মতামত জানান