সোনারগাঁয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মৃত্যুর দায় কার?

প্রকাশিত



নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বন্ধ লাইনে সার্ডটাউনের সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কারনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ঘটনাস্থলে একজন লাইনম্যান (ইলেক্টিশিয়ান) রহস্যজনক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনা নাকি হত্যা এ রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে জানান সোনারগাঁ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের পিতা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, ৬ ডিসেম্বর বুধবার উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের পিয়ারনগর এলাকায় ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদুৎ লাইনের শাটডাউনের সময় সময় হঠাৎ বন্ধ লাইনে কে বা কারা বিদুৎ সংযোগ দিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইব্রাহিম (২৫) নামের একজন লাইনম্যান নিহত ও সাজু (১৮) নামের আরেকজন মারাত্মক আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসকরা ইব্রাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর শুনে নিহতের লাশ হাসপাতালে ফেলে টিকাদার মফিজউদ্দিন পালিয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত মুঠো ফোন বন্ধ করে দেয় বলে জানান, সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এস এম শরিফুল।

প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও নিহত ইব্রাহিমের সহকর্মীরা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নায়েব আলী খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত¡াধিকারী ঠিকাদার মফিজদ্দিন মিয়া কাবিলগঞ্জ এলাকার সাবষ্টেশনের ৩ নং ফিডারের আওতাভ’ক্ত মোগরাপাড়া কলেজ সংলগ্ন ব্রীজ থেকে পিয়ারনগর ষ্টিল ব্রীজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইনের শাটডাউনের কাজের টিকাদারি নিয়ে কাজ করছিলেন। তাই এ ফিডারের আওতাভুক্ত লাইনে সকাল ৮ থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা কিন্তু কাজ চলাকালীন সময়ে বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটা থেকে সোয়া চারটার সময় কে বা কাহারা হঠাৎ করে বিদুৎ সংযোগ দিলে বিদ্যুতের তারের সাথে ঝুলে ঘটনাস্থলে লাইনম্যান ইব্রাহিম মারা যায় এবং সাজু মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঠিকাদার মফিজউদ্দিনের সহযোগী কবির হোসেন আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইব্রাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় কবির হোসেন, ঠিকাদার মফিজউদ্দিন ও তার লোকজন লাশ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়।

নিহত ইব্রাহিম মিয়া ও আহত সাজু মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের মাধবপুর, সোনাখালী এলাকার খোকন মুন্সীর বাড়ির ভাড়াটিয়া। নিহত ইব্রাহিম আড়াইহাজার উপজেলার, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের হাজীরটেক গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। আহত সাজু মিয়া কিসামা (চন্দ্রপুর) গ্রামের, আদিতমারী থানা, নীলফামারী জেলার আব্দুল মান্নানের ছেলে।

ঠিকাদার মফিজউদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমরা কাজ করার দুদিন আগে জোনাল অফিসে কাজ চলাকালীন সময়ে বিদুৎ বন্ধ রাখার আবেদন জানাই। আমাদের কাজ শেষে হলে সাইট সুপার ভাইজার বিদুৎ সংযোগ চালু করতে জোনালের ইনচার্জে থাকা ইঞ্জিনিয়ারকে কনফারমেশন ম্যাসেজ দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন। কাজ চলাকালীন সময়ে কিভাবে সংযোগ চালু হয়েছে তা বলতে পারব না।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, সোনারগাঁ পল্লী বিদ্যুতের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জোনাব আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোন লাইনে সার্টডাউনের কাজ চললে লাইন চালু ও বন্ধ করার দায়িত্ব ঠিকাদারের আওতাভুক্ত। কে বা কারা বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

এ ব্যাপারে নিহতের আত্মীয়রা জানান, ঠিকাদার মফিজ মিয়া একই এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে। এ কোন দুর্ঘটনা হতে পাওে না। এটা পরিকল্পিত হত্যা। এ হত্যার দায় কার? পল্লী বিদ্যুৎ, ঠিকাদার নাকি তৃতীয় কোন পক্ষ? এ হত্যার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের চিহ্নিত করে দৃস্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান। তারা জানান, নিহত ইব্রাহিমের দেড় বছরের সংসার জীবনে দুই মাসের একজন ছেলে সন্তান রয়েছে।

রাত সাড়ে ১১ টায় সোনারগাঁ থানায় গিয়ে দেখা যায়, নিহতের লাশ একটি নসিমন গাড়িতে রাখা। এ সময় নিহতের ভাই ও আত্মীয় কোরআন তেলওয়াত করছেন। তারা জানান সকাল ৭টায় লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। এ পর্যন্ত তারা লাশের পাশে থাকবেন।

সোনারগাঁ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লাশ হাসপাতাল থেকে সোনারগাঁ থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ কাজ করছে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যুর মামলার প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তেরর জন্য লাশ জেলা মর্গে পাঠানো হবে।

আপনার মতামত জানান