নিজের তৈরি ফাঁদেই প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশিত



ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে বৃদ্ধ নওশের আলীর মৃত্যুর শোক না কাটতেই এবার বন্যহাতি তাড়ানোর জন্য বিদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করে সে ফাঁদে নিজেই জড়ালেন এক যুবক। মর্মান্তিক ওই ঘটনাটি ঘটে উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়নের কড়ইতলী গ্রামে। নিহত ওই যুবকের নাম জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)। সে কড়ইতলী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে জাহাঙ্গীর আলম বন্যহাতির আক্রমণ থেকে আবাদী আমন ধানের ফসল রক্ষা করার জন্য জেনারেটরের মাধ্যমে তার সংযোগ দিয়ে সীমান্ত এলাকায় কারেন্ট শক-এর ব্যবস্থা করে। কিন্তু অসাবধানতাবশত তিনি নিজেই বিদ্যুতায়িত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর আগেও এই গ্রামে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে আবাদী জমির ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে বৃদ্ধ নওশের আলীর মৃত্যু হয়।

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আছিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার শ্বশুর অনেক আগেই মারা গেছে। আমার সংসারে আমার স্বামীই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। আমার তিন সন্তানের ভবিষ্যত কি হবে। আমরা শেষ হয়ে গেছি। হাতির আক্রমণে আমাদের ফসল শেষ। এখন স্বামীকে হারালাম, আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচবো।

নিহতের বড় ভাই জয়নাল আবেদীন ও জুলহাস মিয়া বলেন, বন্যহাতির পাল এসে আমাদের রোপণকৃত আমন ধানের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। বন্যহাতির আক্রমণ থেকে যতটুকু ফসল অবশিষ্ট আছে তা রক্ষায় আমার ভাই জাহাঙ্গীর দু’দিন ধরে জেনারেটর এর মাধ্যমে তার সংযোগ দিয়ে সীমান্ত এলাকায় কারেন্ট শক-এর ব্যবস্থা করেছিল। এখন বিভিন্ন সময় হাতির দল কৃষকদের রোপণকৃত জমিতে নেমে ফসল নষ্ট করে। সরকারিভাবে আমরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই না। বন্যহাতির পাল এখনো কড়ইতলী এলাকায় বিচরণ করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম সুরুজ মিয়া বলেন, হাতি তাড়ানোর জন্য জেনারেটরের মাধ্যমে তার দিয়ে সীমান্ত এলাকায় কারেন্ট শক-এর ব্যবস্থা করার সময় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে জাহাঙ্গীরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর আগেও এক কৃষক হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন। আমরা সরকারের কাছে হাতির আক্রমণ থেকে কৃষকদের ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী একটি ব্যবস্থার দাবি জানাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলে কৃষকরা আর দাঁড়াতে পারবে না।

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুজ্জামান খান বলেন, আমরা সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশ রয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আপনার মতামত জানান