কাশফুলে মনদোলে!

প্রকাশিত


ষড়ঋতুর বাংলায় বর্ষাকালকে বিদায় জানাতে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে ফিরে আসে শরৎকাল। শরৎ এলে বাংলার প্রকৃতি কাশফুলের সাদা-সবুজের সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়। বাঙালির হৃদয়ে আনন্দের আশা জাগে। শিশিরভেজা মাঠজুড়ে সবুজ ঘাস, নীল আকাশ ও সাদা কাশফুল শিহরণ জাগায় হৃদয়ে।


আবার কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধী গুণও রয়েছে। শরীরে ব্যথানাশক হিসেবে বিষ ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশফুল গাছের মূল ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই আদি যুগ থেকে। কাশমূল বেটে গায়ে মাখলে শরীরের দুর্গন্ধ দূর হয়। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশফুল গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে ঔষধ তৈরি করে তা নিয়মিত পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়।
বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুল নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান, গল্পই বলে দেয় দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের চোঁখ জুড়ানো সৌন্দর্যই ঋতু রানী শরতের অন্যতম আকর্ষণ। শরতের কাশফুল নিয়ে কবিগুরু লিখেছেন ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা। নবীন ধানের মঞ্জুরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা’। বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন-‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, শ্রষ্ঠার কী অপার সৃষ্টি।’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রকৃতিতে চলমান শরতে নদ-নদী ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ কাশবনই এখন প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একমাত্র বিনোদন স্থল। মেঘনা নদীর কোলঘেঁষা বাটিবন্দর, কান্দারগাঁও, রতনপুর, কোরবানপুর, নয়াচর, চরকিশোরগঞ্জ এলাকার বালুর মাঠ এলাকাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর র্তীরবর্তী মাঠ জুড়ে এখন দোদুল্যমান সাদা কাশফুলের সমাহার।


কাশফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতিপ্রেমীরা এসব স্থানে ঘুরতে আসেন। প্রতিদিনই কাশবন এলাকায় দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন একটু প্রশান্তির আশায় স্বপ্নের কাশফুলের রাজ্যে। বিকেল গড়াতেই দেখা যায় দলবেঁধে তরণ-তরুণীরা আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আপন মনে মনে গান গেয়ে, কেউ কবিতা পড়ে, কেউ ভিডিও কিংবা সেলফি তুলে মজা করতে করতে সময় পাড় করছেন। পরিবারের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দ উচ্ছ্বাস সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করছে।

বাটিবন্দর কাশবনে সহকর্মীদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শিক্ষিকা দিলরুবা রোজি ও সাথিয়া সুলতানা। তারা বলেন, কাশবনে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রকৃতি সবসময়ই এমন শুভ্র থাকুক। বাতাসের চঞ্চলতায় আমরা মুগ্ধ। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই।

পৌরসভা থেকে ঘুরতে আসা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, মেঘনা নদীর কোলঘেষা এ এলাকায় নদী ও প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে সুন্দর একটি কাশবন পেয়েছি। সত্যিই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।


কান্দারগাঁও এলাকার কাশবনে ঘুরতে আসা রোজিনা আক্তার বলেন, বাঙালি নারীর কাছে সব থেকে আনন্দ হলো শাড়ি পরে শরতের সাজে প্রিয় মানুষের সাথে কাশবনে ঘোরাঘুরি করা। এজন্যই যুগ যুগ ধরে কবি সাহিত্যিকরা নারীকে তাদের গল্প- কবিতায় এবং নারী নিজেই নিজেকে শরতের শুভ্রতায় সাজিয়ে তুলতে চেয়েছেন তার প্রিয় মানুষের কাছে।

পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী রিহা ও মিহা বলেন, বিস্তীর্ণ কাশবন দেখে সত্যি হৃদয় জুড়িয়ে গেছে। তবে কাশবনে যেভাবে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে তাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিৎ।

সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের আইসিটি শিক্ষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, কাশফুলের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান হচ্ছে নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটি। ওই মাটিতে খুব সহজেই কাশফুল গাছ বেড়ে ওঠে। এ দৃশ্য মন ও মননে আনন্দের দোলা দেয়। তবে ঘুরতে আসলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় যেন কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে কারন কাশবনে এ সময় বখাটেদের আনাগোনা থাকে।


আপনার মতামত জানান