১৪০ টাকার খাল খননে ৪০০ টাকা আবদার
বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতি ঘনমিটার খাল খননে সরকারের বরাদ্দ ১৪০ টাকা হলেও ৪০০ টাকার আবদার জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এই আবদারকে অযৌক্তিক বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একইসঙ্গে চলমান অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি ঘন মিটার খাল খননে ১৪০ টাকাই নির্ধারণের বিষয়ে মত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় ৪০ হাজার ঘনমিটার লেক ও খাল খনন বাবদ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আবদার করা হয়েছিল। ফলে প্রতি ঘন মিটার বাবদ খনন কাজে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪০০ টাকা।
‘নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় ডাল ও তৈল বীজ বর্ধন খামার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে ওই বেশি টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ৫০ হাজার ৬০০ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। খাল খননের মাটি এখানে ব্যবহার করা হবে কি? এই বিষয়েও কোনো ব্যাখ্যা নেই।
বাড়তি ব্যয় চাওয়া প্রসঙ্গে বিএডিসির প্রধান (পরিকল্পনা) আহমেদ হাসান আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএডিসি নিজস্ব রেট সিডউল আছে। পিডাব্লিউডির (পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট) রেট সিডিউল আর বিএডিসির রেট সিডিউল এক নয়। অনেক সময় আমরা পিডাব্লিউডির চেয়ে কম টাকায় খাল খনন করি। ব্যয় বেশি ধরা হলেও সামনের ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ সভা আছে সেখানে সংশোধন করা হবে।’
বিএসডিসি সূত্র জানায়, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্থাপিত খামার সম্প্রসারণ ও চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন ডাল-তেল ও অন্যান্য বীজ উৎপাদন করা হবে। ডাল ও তৈল ও অন্যান্য বীজ উৎপাদন করা হবে প্রকল্পের আওতায়। ডাল-তৈল বীজসহ অন্যান্য বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সুবিধাদি বৃদ্ধিসহ পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ পদ্ধতি চালু করা হবে। খামার ও প্রকল্প এলাকায় প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বীজ প্রযুক্তি, বাগান তৈরি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও চাষিদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি।
বিএডিসি সূত্র জানায়, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার পাশাপাশি জনগণের সুষম খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের কৃষিতে ডাল, তৈল, শাক-সবজি, ফল-মূল ইত্যাদির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমান চাষ ব্যবস্থায় ডাল ও তেল ফসলের ক্ষেত্রে জমি না বাড়িয়ে উন্নত জাত ও আধুনিক চাষাবাদে ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর জেলাসমূহে অনেক চর রয়েছে যেগুলো অব্যবহৃত কিংবা সীমিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব এলাকায় ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন ও সম্প্রসারণের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ১৮ হাজার ২০০ কেজি মৌলবীজ সংগ্রহ করে ৭৫০ টন ভিত্তি বীজ উৎপাদন এবং ৫০০ টন মান সম্মত বীজ উৎপাদন করা হবে।
এছাড়াও ৮০০ বর্গমিটার থ্রেসিং ফ্লোর, ৪ হাজার ৫০০ রানিং মিটার রাস্তা, ১৬’শ মিটার রানিং সীমানা প্রাচীর, ১৫’শ রানিং মিটার ব্যারিড পাইপ লাইন, ৬৬০ বর্গমিটার ডর্মেটরি ও ২৫০ টন ধারণক্ষমতার একটি ট্রানজিট স্টোর নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ২১ জন চাষি, ১০৫ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বীজ উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় দুটি ট্রাক্টর, একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ১০০টি প্লাস্টিকের ডানেজসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি কেনা হবে।
আপনার মতামত জানান