কীভাবে হরতাল-অবরোধ পালন করবে আওয়ামী লীগ?
বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর প্রায় ছয় মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে দলটি।
নিজেদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ-সমাবেশ পালনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
“জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া এই অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই,” বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম।
এমন একটি সময় আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যখন দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতারা হয় কারাগারে, না হয় ‘পলাতক’ রয়েছেন।
এমনকি দলটির সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত ছয় মাস ধরে ভারতে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে, গত পাঁচই অগাস্টের পর মামলা-হামলার ভয়ে ঘরছাড়া কর্মীরাও সবাই এলাকায় ফিরতে পারেননি। অল্প যে কয়েকজন ফিরেছেন, তারাও প্রকাশ্যে আসতে চাচ্ছেন না।
এ অবস্থায় দলটি কীভাবে হরতাল-অবরোধের মতো রাজপথের কর্মসূচি পালন করবে এবং সেক্ষেত্রে তারা কতটুকু সফল হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ হরতাল-অবরোধ পালনের চেষ্টা করলে সেটি প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে, নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গত দশই নভেম্বর দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেও শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নামতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সেদিন মাঠ দখলে রেখেছিল বিএনপি-জামায়াত এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
“আওয়ামী লীগ যতক্ষণ পর্যন্ত না গণহত্যা, খুন ও দুর্নীতির জন্য ক্ষমা চাইবে, এর জন্য দায়ী নেতাকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি করবে এবং বর্তমান নেতৃত্ব ও তাদের ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ যতক্ষণ সরে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেয়া সম্ভব না,” বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সাংগঠনিকভাবে রীতিমত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ।
শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ জেলে, বাকিরা পলাতক। এ অবস্থায় নেতৃত্বশূন্যতায় চরম দিশেহারা তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি।
দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূলেও কেউ কেউ এলাকায়ও ফিরতে শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের হতাশা ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছে দলটি।
ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
“দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলাসহ নানা কারণে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়। তাই মানুষকে রক্ষা করার জন্য, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আমরা এই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি,” বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম।
“আমাদের এই লড়াই ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং জনতার শাসন প্রতিষ্ঠা করা জন্য,” বলেন মি. নাছিম।
কিন্তু কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বেশির নেতা যেখানে কারাবন্দি ও পলাতক রয়েছেন, সেখানে কর্মসূচি সফল হবে কীভাবে?
“আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের দল। জনগণের স্বার্থে, জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এই আন্দোলন কর্মসূচি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষরাই এই হরতাল-অবরোধ পালন করবে,” বলেন নাছিম।
কর্মসূচি সফল করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় এই নেতা।
“প্রতিটি এলাকায় আমাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রস্তুত রয়েছেন। সাধারণ মানুষের দাবি আদায়ে তারাও মাঠে থাকবেন এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালন করবো,” বলেন বাহাউদ্দিন নাছিম।
কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আপনার মতামত জানান