ফ্রিল্যান্সারের সাড়ে তিন কোটি টাকা গায়েবের অভিযোগে ৭ ডিবি সদস্য ক্লোজড
গভীর রাতে কার্যালয়ে তুলে নিয়ে চট্টগ্রামে এক ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবির এক টিমের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ঘটনা সামনে আসার পর অভিযুক্ত ডিবি সদস্যদের ক্লোজড করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
জানা গেছে, অনলাইন জুয়ার অভিযোগ তুলে আবু বকর সিদ্দিক নামে ওই ফ্রিল্যান্সারকে গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার দিকে ডিবি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যায় টিমটি। পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তুলে নেয় দশ লাখ টাকা। এর বাইরেও কৌশলে তার বাইন্যান্স একাউন্ট থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার সমমানের ক্রিপ্টোকারেন্সি সরিয়ে নেন ওই ডিবি কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে তার মুঠোফোন ও পকেটে থাকা টাকা-পয়সাও কেড়ে নেন তারা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ওইদিন রাতে অক্সিজেন এলাকা থেকে তুলে মনসুরাবাদ ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় তাকে। এরপর গভীর রাতে সেখানে কয়েকবার জোর করে তার মুঠোফোনে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়। পরে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আদায় করা হয় দশ লাখ টাকা। ওই টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া হয় ভিন্ন দুইটি অ্যাকাউন্টে। এছাড়া তার বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
আবু বকর সিদ্দিকের দাবি, দীর্ঘ ১৪ বছর ফ্রিলান্সিং করে অর্জিত তার সব অর্থ সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এমনকি তাকে ও তার পরিবারকে মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে আতঙ্কের মধ্যে আছেন জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন এ ফ্রিল্যান্সার।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ তার দলের সাত সদস্যকে ক্লোজড করেছে সিএমপি। ডিবি হেফাজতে থাকাকালীন কীভাবে মুঠোফোন থেকে অর্থ ট্রান্সফার হয়, সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এজন্য গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি কমিটি। পাশাপাশি কাউছার আহমেদ নামে এক যুবককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূলত এই কাউছারের একাউন্টেই পাঠানো হয় এই কারেন্সি এবং সে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবি সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার মোছা. সাদিরা খাতুন বলেন, যেহেতু অভিযোগ এসেছে আমরা তদন্ত কমিটি করেছি এবং টিমে যারা ছিল তাদেরকে ক্লোজ করে রেখেছি। তদন্ত কমিটি দেখবে, ডিবির হাতে মোবাইল আসার পর টাকাগুলো গেল, নাকি আগে বা কোন পর্যায়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, টাকাটা যার মোবাইলে গিয়েছে সেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা করে, এখন আমাদের দেখার বিষয় এর সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু, যদি আমাদের টিমের সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আপনার মতামত জানান