রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের চমক

প্রকাশিত

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছে—আলোচনায় ঘুরছিল অর্ধ ডজন নাম। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জল্পনা-কল্পনার পালে লাগে হাওয়া। তবে কাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে ধারনা দিতে পারছিলেন না ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারাও। অবশেষে এখানেও চমক দেখালেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপপুর হাতে দলীয় মনোনয়ন তুলে দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।


যদিও সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র আগেই নিশ্চিত করেছিল, বিগত কয়েক দিন ধরে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে, তাদের কারোরই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এমনকি কোনো নারীও এই পদের জন্য মনোনীত হচ্ছেন না। ঠিক তাই হলো।

রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ সভাপতি যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেই সাহাবুদ্দিন চুপপুর নাম ওই অর্থে আলোচনাতেই ছিলেন না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর সব চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও বেশ আলেচনায় ছিল।

শেষ সময়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্চিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নামও শোনা যায়। তবে বেশ জোরেশোরে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামটিও তফসিল ঘোষনার পর আলোচনায় আসে।

এ অবস্থায় গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকে আওয়ামী লীগ। সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষমতা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হয়।

ওই বৈঠকের পর দলীয় সূত্র বলেছিল, দলীয় প্রার্থী কে হবেন তা ১২ ফেব্রুয়ারির আগে প্রকাশ করার সম্ভাবনা কম। সে দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রবিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপরই দলের সভানেত্রী প্রতিনিধি দলকে রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিন চুপপুকে মনোনয়ন দেন।

মনোনয়ন দেয়ার পর সাহাবুদ্দিন চুপপুকে ফুল দিয়ে বরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে যায়।

সেখানে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে দেখা করে প্রতিনিধি দলটি। এসময় সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপপুও সঙ্গে ছিলেন।

মনোনয়নপত্র দাখিলের পর নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম জানান, সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়নপত্র প্রস্তাবকারীর নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থনকারীর নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, সকাল ১১টায় একটি ও ১১টা ৫ মিনিটে অপর মনোনয়ন জমা পড়ে। আগামীকাল (আজ) সোমবার দুটি মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। আর প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত রাষ্ট্রপতির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আইন অনুযায়ী একই ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ তিনটি মনোনয়ন জমা দেওয়া যেতে পারে।

মনোনয় দাখিলের পর নির্বাচন কমিশন থেকে বের হওয়ার সময় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সাহাবুদ্দিন চুপপু বলেন, ‘সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সব সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।’

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন চুপপুর নাম চূড়ান্ত করেছেন। দলের পক্ষে আমরা সেই মনোনয়নপত্র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি।

তিনি বলেন, মো. সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। ১৯৪৯ সালে তিনি পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতোপূর্বে জেলা দায়রা জজ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ৩ বছর তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রবিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এদিন আর কেউ এ পদে মনোনয়ন জমা দেননি।

সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। যেহেতেু এই পদে আর কোনো প্রার্থী নেই সেহেতু এদিনই আওয়ামী লীগ মনোননীত প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।

সে হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদে আর কোনো প্রার্থী নেই। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও প্রার্থী না দেয়ার কথা আগেই জানিয়েছে। তাছাড়া জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন-এটি নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া যায়।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি পদে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তার বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী তিনি আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারবেন না।

সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে। সে হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আপনার মতামত জানান