মহানবী (সা.)-এর খাবার যেমন ছিল
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধে জীবনাচার : মহানবী (সা.) খুব সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর খাবার ও বিছানা ছিল একেবারে সাদাসিধা। রাসুল (সা.) খানাপিনার ব্যাপারে অল্পে তুষ্ট ছিলেন। উরউয়াহ (রা.) বলেন, একবার আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) আমাকে বলেন, ‘হে ভাগ্নে! আমরা দুমাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু (এর মধ্যে) আল্লাহর রাসুলের বাড়ির চুলাগুলোতে আগুন জ্বলত না।’ আমি বললাম, আপনারা কিভাবে দিনাতিপাত করতেন? তিনি বলেন, ‘দুটি কালো বস্তু খেজুর ও পানি দিয়ে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৯)
অন্যত্র আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় আসার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর পরিবারের লোকেরা একনাগাড়ে তিন রাত গমের রুটি পেট পুরে খাননি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪১৬)
আবু কাতাদাহ (রহ.) বলেন, আমরা একবার আনাস বিন মালেক (রা.)-এর দাওয়াতে হাজির হলাম। খাওয়ার শুরুতে তিনি আমাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা খান! আমার জানা নেই, নবী করিম (সা.) মৃত্যুর সময় পর্যন্ত পাতলা রুটি দেখেছেন কি না। আর তিনি কখনো ভুনা বকরির গোশত চোখে দেখেননি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪২১)
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে নিরুৎসাহ : সুস্থ-সবল শরীরে আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশে সাধ্যমতো উত্তম ও সুস্বাদু খাবার গ্রহণে ইসলামের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও অপচয় করা থেকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। মিকদাম ইবন মাদিকারাব (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮৩)। রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৮২)
যেমন রাসুল (সা.)-এর বিছানা : রাসুল (সা.) আখিরাতমুখী সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। দুনিয়ার যৎসামান্য আসবাবপত্রে তাঁর অল্পে তুষ্টির নমুনা তুলনাহীন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একবার নবী করিম (সা.) একটি খেজুরপাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তাঁর দেহের চামড়ায় (মাদুরের) দাগ বসে গেল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। আপনি আমাদের অনুমতি দিলে আমরা আপনার জন্য মাদুরের ওপর কিছু (তোশক) বিছিয়ে দিতাম। তাহলে তা আপনাকে দাগ লাগা থেকে বাঁচিয়ে রাখত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুনিয়ার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? আমি দুনিয়ায় এমন এক মুসাফির ছাড়া তো কিছু নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিল। অতঃপর তা ত্যাগ করে গন্তব্যের দিকে চলে গেল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৭)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরপাতার আঁশ।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৬)
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান