৫০০ বছরের হজযাত্রার সাক্ষী

প্রকাশিত

তাবুক দুর্গ। সৌদি আরবের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। প্রায় ৫০০ বছর আগে হাজিদের বিশ্রাম ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি নির্মাণ করা হয়। কালের বিবর্তনে এটি এখন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অবস্থান : তাবুক দুর্গ সৌদি আরবের তাবুক অঞ্চলে অবস্থিত। এটি মদিনা থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার দূরে এবং মদিনা থেকে শাম পর্যন্ত বিস্তৃত প্রাচীন বাণিজ্য পথের পাশে অবস্থিত। এই পথ ধরেই প্রাচীনকালে হাজিরা মক্কায় গমন করত। আরবের ব্যবসায়ী কাফেলা শামে গমন করতেন।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব : তাবুক প্রাসাদটি একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ধারণা করা হয়, কোরআনে বর্ণিত ‘আসহাবে আইকা’ বা আইকা সম্প্রদায়ের বিচরণস্থল ছিল দুর্গের এলাকাটি এবং তারাই খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সালে এখানে প্রথম স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। নবম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাবুক অভিযানের সময় এই প্রাসাদের সন্নিকটে কোথাও অবস্থান করেছিলেন এবং সে সময় তিনি ‘আইন আল-সিকর’ নামক যে ঝরনা থেকে পানি পান করেছিলেন তার সঙ্গে যুক্ত প্রাসাদের দুটি জলাধার। এ ছাড়া এটি প্রাচীন হজ ও বাণিজ্য পথকেও চিহ্নিত করে। শাম ও মদিনার প্রাচীন বাণিজ্য পথ ধরেই শৈশবে ও যৌবনে বাণিজ্য কাফেলার সঙ্গে দুবার শামে গমন করেছিলেন মহানবী (সা.)।

নির্মাণের উদ্দেশ্য : ঐতিহাসিক তাবুক দুর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল প্রাচীন শামের (আধুনিক সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) দিক আগত হজ ও ওমরাহর উদ্দেশ্যে আগত যাত্রীদের নিরাপত্তা ও বিশ্রামের জন্য। এখানে পৌঁছানোর পর হাজিদের স্বাগত জানানো হতো। হজ মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে সাধারণ পথিক ও ব্যবসায়ীরাও এখানে বিশ্রামের সুযোগ পেত।

নির্মাণ ও সংস্কার : প্রাসাদে স্থাপিত একাধিক শিলালিপি থেকে জানা যায়, উসমানীয় সুলতান সুলাইমান ৯৬৭ হিজরি মোতাবেক ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রসাদটি নির্মাণ করেন। সুলতান চতুর্থ মেহমেদ ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদের প্রথম সংস্কার করেন। এরপর ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আবদুল মজিদ এবং ১৯৫০ সালে সৌদি রাজপরিবার আরো দুবার সংস্কার করেন।

নির্মাণ কাঠামো : বর্গাকৃতির তাবুক দুর্গের প্রবেশপথ উত্তর দিকে স্থাপিত। প্রাসাদের মধ্যখানে রয়েছে একটি উন্মুক্ত আঙিনা। আঙিনার মধ্যভাগে আছে একটি কূপ এবং তার চারদিকে গম্বুজবিশিষ্ট কয়েকটি কক্ষ। প্রাসাদের ওপর তলায় আছে আরো কিছু কক্ষ। তাবুক প্রাসাদের নিচ তলা ও ওপর তলায় পৃথক দুটি মসজিদ আছে। নিচ তলার মসজিদ কক্ষের মতো এবং ওপর তলার মসজিদ কিছুটা উন্মুক্ত। ধারণা করা হয়, নিচ তলার মসজিদে শীতকালে এবং উপর তলার মসজিদে গ্রীষ্মকালে নামাজ আদায় করা হতো। ওপর তলা থেকে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারগুলোতে যাওয়ার সিঁড়ি রয়েছে। প্রাসাদের নির্মাণকাজে চুন, মাটি, পাথর ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ১৯৯২ সালে প্রাসাদটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হওয়ার পর তাতে বৈদ্যুতিক বাতি ও লোহার সিঁড়ি যুক্ত হয়েছে।

সূত্র : আরব নিউজ ও ইসলামিক আর্কিটেকচারাল হেরিটেইজ

আপনার মতামত জানান