হারাম উপার্জন জীবন থেকে বরকত তুলে নেয়

প্রকাশিত




হারাম উপার্জনে বাহ্যিকভাবে প্রাচুর্য দেখা গেলেও মূলত তা মানুষের জীবন থেকে বরকত তুলে নেয় । পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন আর দান-সদকা বাড়িয়ে দেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, যে সম্পদের সঙ্গে সুদ মিশ্রিত হয়ে যায়, বেশির ভাগ সময় সেগুলো ধ্বংস হয়, অধিকন্তু আগে যা ছিল, তা-ও সঙ্গে নিয়ে যায়। সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়।

এভাবে হারাম উপার্জন মানুষের রিজিক কমিয়ে দেয়।

দোয়া কবুল হয় না

kalerkanthoহালাল ভক্ষণ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত। হারাম খেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)

দান-সদকা কবুল হয় না

দান-সদকা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম, তবে তা হারাম উপার্জনের টাকা দিয়ে করলে কবুল হয় না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৩৯)

নবীজির অভিশাপ পতিত হয়

যারা সুদভিত্তিক লেনদেনে লিপ্ত, রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, এরা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৫)

অন্য হাদিসে ঘুষের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকারীদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ঘুষদাতা ও গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩১৩)

অনিবার্য ধ্বংস

হারাম উপার্জন মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। মহান আল্লাহ হারাম উপার্জনকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও। অতঃপর যদি তোমরা না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও…। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৮-২৭৯)

কবরের শাস্তি

হারাম উপার্জন মানুষকে যেভাবে দুনিয়াতে শাস্তি দেয়, তেমনি কবরেও তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খণ্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর। ’ (বুখারি, হাদিস : ২০৮৫)

অতএব, আমাদের সবার উচিত, হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকা। কারণ এর দ্বারা সাময়িক সচ্ছলতা অর্জিত হলেও এর ক্ষতি চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জন করার তাওফিক দান করুন।

আপনার মতামত জানান