সোনারগাঁয় জাতীয় পার্টি ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে?

প্রকাশিত

বিশেষ প্রতিবেদন (ডেইলি সোনারগাঁ) : 


১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেকে গদিনশিন করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মসনদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০। স্বৈরাচারী নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও সোনারগাঁয়ে সাজেদ আলী মোক্তার ও হাসনাত পরিবারের জনপ্রিয়তায় তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে মোবারক হোসেন বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন (১৯৮২-১৯৮৭) । ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এএসএম সোলায়মানকে সোনারগাঁয়ের দায়িত্ব দিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

এতে প্রতিবাদী হয়ে রাজপথে নামে হাসনাত পরিবার। তারা কাঁচপুর থেকে মেঘনা পযন্ত মহাসড়কের গাছ কেটে সারাদেশের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তাদের দাবীর মুখে নতি স্বীকার করে আ.ন.ম বাহাউল হককে সোনারগাঁয়ের জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত করতে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈর সরকারের পতন হয়।

১৯৯১ সালে সোনারগাঁয়ের জনপ্রিয় নেতা আবুল হাসনাত নৌকা প্রতিকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। আ.ন. ম বাহাউল হক তখন হাসনাত পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে সমর্থন দিয়ে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের নৌকায় প্রথম প্যারেক বসিয়ে দেন। দ্বিতীয় বার অর্থাৎ ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.ন.ম বাহাউল হক লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে ধানের শীষ ও নৌকার প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এলাকা ও ভোটের হিসেব নিকেষে আবুল হাসনাত ও আ.ন.ম বাহাউল হক আবারো পরাজিত হয়। সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক রেজাউল করিম।

সোনারগাঁয়ের জনপ্রিয় নেতা, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লাঙ্গল নিয়ে এগুতে না পেরে মহাসমারোহে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করলে মনোয়ন বঞ্চিত হাসনাত পরিবার তাকে নির্বাচনী মাঠে পরিাজিত করতে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। সোনারগাঁয়ে আবুল হাসনাত ও আ.ন.ম বাহাউল হক দ্বন্ধে এক সময়ের অপরিচিত মুখ অধ্যাপক রেজাউল করিম মন্ত্রীত্বের স্বাদ গ্রহন করেন।

এরপর জাতীয় পার্টি নামের এ সংগঠনটি আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। রাজনৈতিক মেরুকরনে হুসেইন মো. এরশাদ আওয়ামী লীগের সাথে জোট করলে আবার কপাল পুড়ে সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠে একেবারেই লিয়াকত হোসেন হোসেন খোকা। ২০১৮ সালে আবারো দলীয় রাজনীতির বলি হয় সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিবারই মূখ্য ভুমিকা রাখে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল।

জাতীয় পার্টি তৃতীয় মেয়াদে সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও ভোটের মাঠে একবারও যেতে হয়নি। পরখ হয়নি তাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু। তবে পৌরসভা নির্বাচন জনতার সামনে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা মাপার সে সুযোগ এনে দিয়েছে বলে অনেক ভোটার খুশি। সোনারগাঁ পৌরসভা থেকে জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মীনী ডালিয়া লিয়াকত লাঙ্গল মার্কায় নির্বাচনের ঘোষনা দেয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সাধারন ভোটাররা। জাতীয় পার্টির জনসর্মথন যাচাইয়ের এটাই মোক্ষম সময়। তবে ডালিয়া লিয়াকত শেষ পযন্ত লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচন না করলেও লাঙ্গলের তকমা কোথায় নিয়ে যায় তা দেখার অপেক্ষায় পৌরবাসী।

আপনার মতামত জানান