সিঙ্গাপুরের প্রথম মুসলিম নারী প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত



নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের প্রথম মুসলিম নারী প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব। এর আগে তিনি দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশটির নির্বাচন বিভাগ তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদে একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং তিনি হয়ে যান সিঙ্গাপুরের অষ্টম এবং প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।

সিঙ্গাপুরের প্রভাবশালী এই মুসলিম নারী প্রেসিডেন্ট ১৯৫৪ সালের ২৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তানজং ক্যানটং গার্লস স্কুলে এবং পরে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসে (এনটিইউসি) একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর তাঁকে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১১ সালে তিনি সামাজিক উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এর দুই বছর পর তিনি দেশটির সংসদে প্রথম নারী স্পিকার নিযুক্ত হন।

তাঁর কর্মজীবনের ফিরিস্তি যতটা মসৃণ মনে হচ্ছে, তার জীবনের শুরুটা তেমন মসৃণ ছিল না। মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি তাঁর বাবাকে হারান। পরিবারের পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ (সবার ছোট) হালিমা। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল মাকেই ধরতে হয়েছে। সন্তানদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে হালিমার মা রাস্তার পাশের একটি খাবারের স্টলে কাজ করতেন। ১০ বছর বয়স থেকে হালিমা স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাঁর মাকে স্টলটি পরিষ্কার, বাসনপত্র ধৌতকরণ, টেবিল পরিষ্কার, কাস্টমারদের খাবার পরিবেশন প্রভৃতি কাজে সাহায্য করতেন।

এরপর ১৯৭০ সালে তানজং ক্যানটং গার্লস স্কুলে এবং পরে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পন্ন করেন হালিমা। নানা কষ্ট এবং সমস্যা আর ভোগান্তিকে নিত্যসঙ্গী করে হালিমার এই সময়গুলো কেটেছে। হালিমা তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘জীবনের এই সময়গুলোতে অনেকবার নিজেকে আত্মহত্যার হাতে সঁপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু যখনই ভেবেছি আমি একজন মুসলিম, তখনই আবার ফিরে এসেছি এবং নতুন করে জীবন সাজাতে শুরু করেছি।’

১৯৮০ সালে হালিমা ইয়াকুব বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-হাবসিকে বিয়ে করেন। বর্তমানে পাঁচ ছেলেমেয়ের জনক-জননী তাঁরা। কর্মময় জীবনের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন হালিমা ইয়াকুব।

আমার মতে তাঁর জীবনকে ঘুরিয়ে দেওয়ার পেছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে কাজ করেছে, তা হলো, ইসলামী মূল্যবোধ। ইসলামী মূল্যবোধ তাঁকে আত্মহত্যার মতো ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে বাধ্য করেছে, ধৈর্য সহকারে জীবনের কাঁটাময় পথ মাড়িয়ে সফলতার মসনদে বসিয়েছে।

এখন তিনি শুধু মুসলিম নারী নন, পৃথিবীর সব নারীর জন্য উদাহরণ। একজন মুসলিম নারীর জন্য সবচেয়ে গর্ব করার মতো বিষয় হলো- বিশ্বের সর্বাধুনিক একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানের এই স্থানে পৌঁছানোর জন্য হালিমা কখনো তাঁর ব্যক্তিসত্তা এবং মুসলিম ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেননি। তাঁর এই আদর্শিক অবস্থান আরো একবার প্রমাণ করল, কারো কোনো ব্যক্তিসত্তা বা জাতিগত আদর্শ কোনো সম্মান অর্জনের পথে অন্তরায় নয়; বরং সহযোগী।

আপনার মতামত জানান