মারমূখী হারুন ধরা ছাত্রলীগে

প্রকাশিত


অনলাইন ডেক্স:
ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক পিটুনির ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। যদিও এর আগে হারুনের বিরুদ্ধে এ রকম অসংখ্য ঘটনার অভিযোগ থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।


হারুনকে প্রত্যাহারের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে এপিবিএনে বদলি করা হয়েছে। এই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ঘটনা তদন্ত করে দেখবেন।


গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম ও বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ্ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহম্মেদ মুনীমকে শাহবাগ থানার ভেতরে ঢুকিয়ে মারধর করার অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গিয়ে তাঁদের দুজনকে নিয়ে আসেন। দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এই ঘটনার জেরে মধ্যরাতে শাহবাগ থানার সামনে ভিড় করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সকাল থেকে ফেসবুকে এই দুই ছাত্রলীগ নেতার ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানান সংগঠনের কর্মীরা। হারুনের চাকরিচ্যুতির দাবিতে গতকাল ঢাবির টিএসসির সামনে মানববন্ধনও হয়।

কী ঘটেছিল শনিবার রাতে
গুরুতর আহত ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন নাঈম একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি গণমাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এবং শরীফ আহম্মেদ মুনীম শাহবাগ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমার এলাকার বড় ভাই রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হককে দেখলাম বারডেম হাসপাতালের সামনে দাঁড়ানো। তিনি জানালেন, তাঁর সঙ্গে বারডেম হাসপাতালের চারতলায় পুরোনো দ্বন্দ্ব নিয়ে এডিসি হারুনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর এডিসি হারুন আমার ওই বড় ভাই এবং শরীফ আহম্মেদ মুনীমকে ডেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে কিছুক্ষণ পর থানায় যাই। এরপরই আমার ওপর চড়াও হন এডিসি হারুন ও অন্য পুলিশ সদস্যরা। ওসির কক্ষে ফেলে আমাকে ১০-১৫ মিনিট মারধর করেন। হারুন তাঁর পিস্তল দিয়ে আমার মুখ থেঁতলে দেন।’

তবে পুলিশের সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিসিএস ৩৩ ব্যাচের নারী এক পুলিশ কর্মকর্তা চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে ৩১ ব্যাচের এডিসি হারুন আসেন। তাঁরা কথা বলেন হাসপাতালের চারতলায়। সেখানে ওই নারী কর্মকর্তার স্বামী ও রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে আসেন। হাসপাতালের ওপরেই তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে হারুন ওয়্যারলেসে পুলিশ ফোর্স ডেকে এনে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে নিয়ে পেটান। ১০ থকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য পেটান। পরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগের নেতারা উদ্ধার করেন।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি থানায় ছিলাম না। তবে পরে শুনেছি, ঘটনাটি পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে ঘটেছে।’
এ বিষয়ে এডিসি হারুনের বক্তব্যের জন্য ফোন দিলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

মুখের আগে হারুনের হাত চলে
‘মুখের আগে এডিসি হারুনের হাত চলে। কথাবার্তা ছাড়াই মানুষের গায়ে হাত তোলেন।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন পরিদর্শক এডিসি হারুনের পুলিশিং নিয়ে এভাবে মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগে আমি তাঁর বিভাগে কর্মরত ছিলাম। তিনি সব সময় মারমুখী আচরণ করেন।’

সূত্র জানায়, এডিসি হারুন এর আগে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক, সাংবাদিক ও পুলিশ সহকর্মীদের প্রকাশ্যে মারধর করেছেন, পিটিয়েছেন। কিন্তু কোনো ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি ডিএমপি।

২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এডিসি হারুন তাঁর এক পুলিশ কনস্টেবলকে থাপ্পড় মারেন। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনরত যুবকদের লাঠিপেটা করেন এডিসি হারুন। এ বছরের মার্চে সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটানোর নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি।

এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ‘বিনা উসকানিতে’ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করার অভিযোগ রয়েছে।

এসব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হয়। কিন্তু হারুন এত দিন ছিলেন বহাল তবিয়তে।

এত সব অভিযোগ থাকার পরও কেন এত দিন এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘শনিবারের ঘটনাটি প্রথম উল্লেখযোগ্যভাবে আসছে, আমরা একটু দেখে নিই। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। তিনি যতখানি অন্যায় করেছেন, সেই শাস্তি তিনি পাবেন।’

তদন্ত কমিটি গঠন
দুই ছাত্রলীগ নেতাকে পেটানোর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে ডিএমপি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আপনার মতামত জানান