বিলীন হচ্ছে ঐতিহ্যের শহর পানাম

প্রকাশিত

ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের পর্যটন নগরী পানামের কয়েক শ বছরের পুরনো ভবনগুলো সংস্কারের অভাবে আজ হুমকির মুখে। দ্রুত মেরামত না করলে ভবনগুলো যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ নগরীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য লিখিতভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

জানা যায়, ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানাম নগরীকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় স্থান দিয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পানাম নগরীকে আংশিক অবৈধ দখলদারমুক্ত করে প্রথমবারের মতো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে পানাম নগরীকে সম্পূর্ণভাবে দখলমুক্ত করা হয়।
২০০৭ সালে সরকার নগরীকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এনে আংশিক সংস্কার কাজ শুরু করে। ৫২ ভবনের মধ্যে ১১ ভবনের আংশিক কাজ করলে ইতিহাসবিদ, পরিবেশ সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এবং স্থানীয় সুশীল সমাজ ভবনের আদিরূপ নষ্ট করার অভিযোগে আন্দোলন করলে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় সরকার।

২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর পানাম নগরীতে প্রবেশের জন্য টিকিট ব্যবস্থা চালু করার পর গত চার বছরে প্রায় ১০ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক টিকেট কেটে পানাম নগরে প্রবেশ করেছেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে ভবনগুলো সংস্কারের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃপক্ষ ও দক্ষিণ কোরিয়ান কম্পানি ইয়াংগুনের প্রকল্প পরিচালক মি. কিহাক সাং পানাম নগরী পরিদর্শন করে মেরামতের সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

কলকাতা থেকে আগত পর্যটক সুবোধ ভট্টাচার্য জানান, ঐতিহাসিক এ নগরীতে আমি আগেও কয়েকবার এসেছি। দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। পানাম নগরীর আদি সৌন্দর্য ঠিক রেখে অচিরেই এটি সংস্কার ও সংরক্ষণের কথা বলেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এর মধ্যেই এ নগরীর প্রায় ২০টি ভবন সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোও রয়েছে হুমকির মুখে। একটু বৃষ্টি হলেই খসে পড়ছে চুন-সুড়কি। সামান্য ভূমিকম্পই এ নগরী ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। এ নগরী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নগরীর প্রতিটি ভবনের প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকে। ফলে এখানে আগত দর্শনার্থীরা ভবনগুলোর অভ্যন্তরের মূল সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত এ নগরীর প্রাচীন জৌলুস ফিরিয়ে আনতে পারলে পানাম নগরীতে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে।

পানাম নগরীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ভাণ্ডার রক্ষক মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, নগরীর ৫২টি ভবনের ১০টি ভবন সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ভূমিকম্প কিংবা একটানা বৃষ্টিতে এ ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোসহ বাকি ভবনগুলোতেও কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভবনগুলোর প্রবেশদ্বার আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, পানাম নগরী সংস্কারের ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক একটি বহুজাতিক কম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সংস্কারের জন্য ওই কম্পানির সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে ইয়াংওয়ান করপোরেশন নামের ওই কম্পানির চেয়ারম্যান ও কোরিয়া ইপিজেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মি. কিহাক সাং পানাম নগরী পরিদর্শনও করেছেন। আমরা আশা করছি দ্রুত এবং ধাপে ধাপে পানাম নগরীর সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে।

আপনার মতামত জানান