বাবার লাশ রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণির সায়েম

প্রকাশিত

বাড়ির উঠোনে বাবার লাশ, এলাকাবাসী আর স্বজনদের আহাজারি। একই দিন দুপুরে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। আদরের একমাত্র সন্তান মো. সায়েম মিয়া (১১) এর শিশুতোষ মনের খেয়াল। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। আজ বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের জাবরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবজাল মিয়া (৫০) আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার দিকে মারা যান। তার ছেলে মো. সায়েম ২৫ নম্বর বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। বেলা ১টায় তার বার্ষিক পরীক্ষা।

খবর পেয়ে স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা সায়েমকে আজ পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ি থাকার জন্য বলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা সায়েম পরীক্ষা দেবেই। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলে আসে সে।

স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সায়েম পরীক্ষার খাতায় লিখছে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমার বাবা আর নেই। বাবা বলত ভালো করে পড়ালেখা করে অনেক বড় হও। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি।’ এ সময় সহপাঠী বন্ধুদের চোখেও পানি দেখা যায়। তার কান্না হৃদয় ছুঁয়ে গেছে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত শিক্ষকদেরও।

তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা শেষ করার পর সায়েমকে নিয়ে শিক্ষকেরা বাড়িতে আসেন। বাড়িতে শোক আর কান্নার মাতম। বাবার লাশের কাছে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে সায়েমও। বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

সায়েমের চাচা শাকিব হাসান বলেন, ‘আবজাল মিয়া লিভারের সমস্যা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি মুন্নু ফ্রেবিক্স লিমিটেডের ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। একটি মাত্র ছেলে সায়েম।’

শ্রেণি শিক্ষক সামছুন নাহার বলেন, ‘পরীক্ষার্থী সায়েমের বাবার মৃত্যুর সংবাদে আমরা মর্মাহত। তাকে বিশেষ মানবিক বিবেচনায় পরীক্ষা না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু মেধাবী সায়েম পরীক্ষা দেবেই। তাই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে আজকের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সান্ত্বনা ও সাহস জুগিয়েছি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ বাবুল মিয়া বলেন, ‘বাবার লাশ বাড়িতে রেখে ছেলে পরীক্ষা দিতে এসেছে। বিষয়টি জানার পর আমরা ওই ছাত্রকে বোঝানোর পরও সে বলে স্যার আমি সিক্সে উঠব। তাই ফাইনাল পরীক্ষা দেবই। পরীক্ষা শেষে ওই ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছি। আমরা সায়েমের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’

আপনার মতামত জানান