ধেয়ে আসছে ‘আম্ফান’

প্রকাশিত

সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই আতঙ্ক বাড়ছে বাগেরহাটের শরণখোলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাউথখালীর মানুষের মাঝে। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সিডরে মৃত্যুপূরীখ্যাত সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদতীরবর্তী পাঁচ গ্রামের মানুষ। সিডর প্রথম আঘাত হেনেছিলো সাউথখালীতে। মৃত্যু হয়েছিলো সাত শতাধিক মানুষের। আম্ফানের গতিপথও সেই সাউথখালী। অথচ, সেখানকার দুই কিলোমিটার এলাকায় কোনো টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি আজও। ভাঙা বাঁধের পাশে এখনো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে শত শত পরিবার।

সামান্য ঝড় এলেই উৎকণ্ঠায় পড়ে যায় বাঁধভাঙা মানুষ। একেকবারের ঝড়ে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঝড় থেমে গেলে আবার এসে বাসা বাধে সেখানে। সর্বশেষ গত ৯মে দক্ষিণ সাউথখালীর গাবতলা আশার আলো মসজিদের সামনের ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ বলেশ্বরে বিলীন হয়ে যায়। সেই আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের খবর তাদেরকে আরো হতাশ করেছে।

চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা, দক্ষিণ সাউথখালী, উত্তর সাউথখালী ও চালিতাবুনিয়া গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার। সেখানকার দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সেই ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে সিডরের পর প্রায় ১৩ বছর পর্যন্ত। প্রতিনিয়ত বাঁধ ভেঙে ভেঙে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আম্ফান আঘাত হানলে সিডরের চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিনতি হবে সেখানে।

বলেশ্বর পাড়ের ঝঁকিপূর্ণ বগী গ্রামের শহিদুল ইসলাম নয়া পঞ্চায়েত (৬০), রুহুল পঞ্চায়েত (৬২) ও খলিল পঞ্চায়েত (৫৫) বলেন, সিডরের পরও বেশ কয়েকটি ঝড় বয়ে গেছে আমাদের ওপর থেকে। ঝড় আর নদী ভাঙনে আমরা নিঃশ্ব হয়ে গেছি। এখন আমাদের কোনো জায়গাজমি নেই। ঝড়-বন্যায় বার বার ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ঝড় থেমে গেলে আবার সেখানে এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসা বেধে বসবাস করতে হয়।

দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. মোশারেফ খান (৫২) বলেন, সিডরে আমার স্ত্রী, ভাই, ভাইজিসহ তিন জন মারা গেছে। আমরা সেই থেকে দাবি করে আসছি একটি টেকসই বেড়িবাঁধের। কিন্তু এখনো এই দুই কিলোমিটারে বাঁধের কোনো গতি হলো না। বর্তমানে বাঁধের যা অবস্থা তাতে এবারের ঝড় সবকিছু শেষ করে দিয়ে যাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধসংলগ্ন বগী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত ও দক্ষিণ সাউথখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হাওলাদার জানান, বগী থেকে দক্ষিণ সাউথখালী গাবতলা আশার আলো মসজিদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসন ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতায় এখানে আজ পর্যন্ত টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি। এই দুই কিলোমিটারে নামমাত্র রিংবাঁধ দেওয়া আছে, যা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ভেঙে পুরো সাউথখালী ইউনিয়ণ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটারে টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এই পেল্ডারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সিডরের প্রবেশদার বগী ও দক্ষিণ সাউথখালীর এ অংশে কোনো কাজ হয়নি। একারণে গোটা সাউথখালী এখন অরক্ষিত। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যদি আঘাত হানে তাহলে ইউনিয়নটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই সাউথখালীবাসীকে বাঁচাতে নদী শাসন ও অধিগ্রহণের জটিলতার সমাধান করে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।

আপনার মতামত জানান