গ্যাস অফিসের নৈশপ্রহরী কোটি কোটি টাকার মালিক

প্রকাশিত



নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি ওয়ার্কশপের মোড় এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন ওরফে গ্যাস মনির তিতাসের নিরাপত্তাকর্মী চাকরি করেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ, চুলা প্রতি গ্যাসের টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন আর গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মনির হোসেন অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার নামের প্রভাব এতোটাই যে তাকে পুরো এলাকাজুড়ে গ্যাস মনির নামে চিনেন এলাকার বাসিন্দারা।

বিজ্ঞাপন

মনির হোসেন ওরফে গ্যাস মনির তিতাস অফিসের নিরাপত্তাকর্মী অথবা নৈশপ্রহরী হলেও এলাকায় তিনি বিশিষ্ট শিল্পপতি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, মনির হোসেন ওরফে গ্যাস মনির তার নিজ এলাকা পাইনাদিসহ আশপাশের এলাকা হীরাঝিল, মিজমিজি, তেরামার্কেট, কান্দাপাড়াসহ আশপাশের তিনিই গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকেন এবং তিতাস অফিসের সঙ্গে যোগসাজশে লাইন বিচ্ছিন্ন করে থাকেন।

মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি মালিক হয়েছেন বহুতলা ভবনের। পাইনাদি ওয়ার্কশপের মোড় এলাকায় চারকাঠা জমির ওপর নির্মিত তার বহুতল ভবনটির আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। তিন কাঠা জমিসহ কয়েকটি দোকানও আছে তার। যার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। এলাকায় ও গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে নামে-বেনামে জমিজমা কিনেছেন। হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিতাস গ্যাস অফিসের নিরাপত্তাকর্মীদের ইনচার্জ মনির হোসেন নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশনে ছয় বছর চাকরি করেছেন। সেই সময়ে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি এলাকার গ্যাসের সকল সংযোগ দিয়েছেন এবং অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আবার পুনরায় চালু করেছেন। পরবর্তীতে তিতাসের সোনারগাঁও কার্যালয়ে এসেও তিনি আবার শুরু করেন অবৈধভাবে আয়। বহু বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও বিচ্ছিন্নের নামে টাকা কামিয়েছেন গ্যাস মনির। এ ছাড়াও অবৈধ সংযোগ রয়েছে এমন বাসা থেকে মাসিকহারে গ্যাসের বিল উত্তোলন করেছেন। সেই সুবাধে তিনি কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে, পাইনাদী এলাকায় অবৈধ গ্যাস ও গ্যাস সংযোগের নামেও তিনি প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চুনাভাট্টির মালিকদের কাছ থেকে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ তিতাস অফিসে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীদের দলপতি মনির হোসেন বিভিন্ন সময়ে নানা কলাকৌশলে গ্যাস সংযোগের নামে ও আবাসিকে গ্যাস সংযোগের নামে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন।

আব্দুল করিম নামে পাইনাদি ওয়ার্কশপের মোড় এলাকার এক চা দোকানি বলেন, ‘এখন আর সে গ্যাস মনির হোসেন নাই, বহু সম্পদের মালিক। এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। গাড়ি হাকিয়ে চলাফেরা করেন। অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ’

হাসিবুল খন্দকার জানান, কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্যাসের সঙ্গে লেনদেন করে মনির হোসেন এখন কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন। এলাকায় তিনি কোটি পতি দানবির হিসেবে চলাফেরা করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, বৈধ সংযোগের কথা বলে মনির হোসেন যে সংযোগ দিয়েছেন তা এখনো অবৈধই রয়ে গেছে। সরকার আবাসিকে তিতাস গ্যাস বৈধ বন্ধ ঘোষণার পর যত সংযোগ মনির হোসেন এলাকায় দিয়েছেন তা সবই অবৈধ হিসেবে রয়েছে। মনির হোসেন তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে এই সংযোগগুলো বৈধ করে রেখেছেন এবং সংযোগগুলো থেকে প্রতি চুলাতে এক হাজার টাকা করে তোলেন। শুধু তাই নয়, অবৈধ সংযোগের কথা বলে বহু বাসিন্দাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন তার ইচ্ছে মতো টাকা।

নিরাপত্তাপ্রহরী হয়ে এত সম্পদের মালিক কিভাবে হলেন জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, ‘আমি যা কিছু করেছি সৎ পথে, সৎ উপার্জনের মাধ্যমে করেছি। অবৈধভাবে কিছুই করিনি। ’

সোনারগাঁ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুরুজ আলম জানান, তিতাসের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ লিখিত আকারে পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তিতাস কতৃপক্ষ।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, অনৈতিকভাবে কেউ যদি অঢেল সম্পদের মালিক হন, সেই বিষয়গুলো তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভির মাহমুদ পাশা বলেন, ‘অপরাধী যেই হউক না কেন তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। অবৈধভাবে কেউ সম্পদ অর্জন করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। ’

আপনার মতামত জানান