কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় আ.লীগ

প্রকাশিত

‘আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি যাদের আস্থা নেই, তাদের দলে প্রয়োজন নেই’, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর একজন সদস্য এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং শ্রমিক লীগ কমিটি বিলুপ্ত করা প্রসঙ্গে।

ওই নেতা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর পক্ষে আন্তরিকভাবে যারা কাজ করেনি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামনে আরও অনেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখতে পারেনি, তারা দলের নয় ব্যক্তি রাজনীতি করেন। তাদেরকে দলে প্রয়োজন নেই।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পূর্বে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরোধীতা করে প্রকাশ্যেই মাঠে নেমেছিলেন সাংসদ শামীম ওসমান পন্থী নেতারা। এই তালিকায় ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অ্যাড. খোকন সাহা, সহসভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন, সেক্রেটারি দুলাল প্রধান, ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সেক্রেটারি বিন্দু প্রমূখ।

তবে, শেষ পর্যন্ত বাদল ও খোকন সাহা ছাড়া আইভীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাউকে নামতে দেখা যাযনি। যদিও বলা হচ্ছে, বাদল ও খোকন আন্তরিকভাবে কাজ করেননি। অন্যদিকে ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগতো একেবারেই মাঠে নামেনি। মহানগর শ্রমিক লীগও আইভীর পক্ষে আন্তরিক ছিল না। তাদের অনেকে আবার নৌকার বিপক্ষে গিয়ে আড়ালে আবডালে হাতি প্রতীকের পক্ষে কাজও করেছিলেন। পুরো নির্বাচনকালিন সময়ে মাঠে নামেননি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীল ও যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম। যা স্পষ্টত দলীয় প্রধানের নির্দেশনা, সিদ্ধান্তকে অবাজ্ঞা করার সামিল বলেই মনে করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, তারা মূলত দল নয়, সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশনার বাইরে কখনই যান না বলেই আওয়ামী লীগ অবগত হয়েছে। যার কারণে একে একে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং শ্রমিক লীগ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এবার আরও কয়েকটি কমিটি ভেঙ্গে দেওয়াসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে আওয়ামী লীগ।

সূত্র আরও বলছে, ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তারা প্রত্যেকেই শামীম ওসমান অনুসারি। দল অবগত হয়েছে, এরা সকলেই ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতি করে। তারা দলের সিদ্ধান্ত মানার থেকে ব্যক্তির সিদ্ধান্তকেই প্রধান্য দেন বেশি। ফলে দলে তাদের প্রয়োজনীয়তা খুব একটা নেই বলেই কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, শাহ্ নিজমা ইতোপূর্বেই একটি বক্তব্যে আইভী প্রসঙ্গে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘দল ভুল করে ভুল মানুষের হাতে নৌকা তুলে দিতে পারে। আমরা ভুল করতে পারি না।’ তিনি তার সেই সিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নৌকার পক্ষে একটি দিনের জন্যও মাঠে নামেননি। পরবর্তীতে দলীয় অ্যাকশন থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে প্রচারও করেন। তবে, নৌকার নির্বাচন চলাকালিন তিনি করোনা আক্রান্ত থাকলেও জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দিন তাকে বেশ সরব দেখা গিয়েছে তার নেতা সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শাহ্ নিজাম নিজেই বলেছিলেন, ‘আমরা ভাই লীগ করি’। যার কারণে তিনি শেখ হাসিনার প্রার্থীর পক্ষে নামেননি। কেননা, তিনি যেই ভাইয়ের রাজনীতি করেন, সেই ভাইতো ছিলেন আইভীর বিরুদ্ধে। ফলে শাহ্ নিজাম বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন, এটাইতো স্বাভাবিক। তারা আরও বলেন, এবার যা ব্যবস্থা নেওয়ার দল নিবে। কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন এসে দেখেছেন কারা দলীয় স্বার্থ দেখে আর কারা ব্যক্তি রাজনীতি করে।

আপনার মতামত জানান