ইমতিয়াজ তুহিন : একাই এক পৃথিবী

প্রকাশিত



হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও প্যাথলজিস্টসহ একদিনেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। লাখাই ও চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করে চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হওয়ার পরই সেগুলো করা হয় লকডাউন। কিন্তু জেলার সবচে’ বড় ও চিকিৎসাসেবার শেষ আশ্রয়স্থল হওয়ায় হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালটি বন্ধ করা হয়নি। তবে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন স্টাফসহ সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালে আর কেউ আসুক বা না আসুক একজন লোক ঠিকই সেখানে দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হলেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ইমতিয়াজ তুহিন। তিনি যে ল্যাবে কাজ করেন সেখানে তার সাথে কাজ করা দুই সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলম ও সুমনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু সেই ল্যাবেই ইমতিয়াজ তুহিন রবিবার একদিনে ৬০ জনের নমুনা গ্রহণ করেছেন করোনা পরীক্ষা করার জন্য। এরা সবাই হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ। ল্যাবে এখন তুহিন ছাড়া আর কেউ নেই।

ইমতিয়াজ তুহিন জানান, হাসপাতালে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এর পদ একটি। তবে এতদিন সেখানে ডেপুটেশনে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। শনিবার তাদের রিপোর্ট পজিটিভ শনাক্ত হয়। ফলে আমার একাই সামলাতে হচ্ছে সকল কাজ। আমি নিজ হাতে কয়েক শ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছি।

ইমতিয়াজ তুহিন জানান, আমি চাকরি করি জীবিকার জন্য। তবে কাজ করি মানবিক কারণে। আমার ডিউটির বাইরেও অন-কলে ২৪ ঘণ্টা কাজ করি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের জন্য। করোনা আসার পর-ও আমি রাত ১১টায় এসেছি। একদিন ভোর ৪টায় কল পেয়ে এসে দেখি রোগী চলে গেছে সিলেটে। রাতবিরাতে ব্লাড ব্যাংকের জন্য কল আসলে আমি বিরক্ত হই না।

তিনি বলেন, যে ল্যাবে কাজ করে সবার করোনা হয়েছে সেখানে কাজ বন্ধ রাখা এবং আমার কোয়ারেন্টিনে থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে আমি বাসায় বসে থাকতে পারি না। তাই সব সময় ছুটে আসি। তবে আমি যেহেতু মানুষ। ২৪ ঘণ্টা তো আর কাজ করা যায় না। তাই একজন লোক ডেপুটেশনে নিয়ে আসলে ভালো হতো। পরিবারের সাথে থাকাটা ঝুঁকি হবে মনে করে এখন আলাদা থাকছি। সবার দোয়া আর ভালোবাসায় আমি এখনও আক্রান্ত হইনি।

এদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহ এবং ২৪ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করে রোগীর জীবন বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তান-পরিবার ছেড়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় হবিগঞ্জের সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। ফেসবুকে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব তার প্রশংসা করেছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন এক জিনিস। আর সমাজের প্রতি কমিটমেন্ট হলো ভিন্ন জিনিস। ইমতিয়াজ তুহিন সমাজের প্রতি কমিটেড হয়েই পেশাগত কাজ করছেন বলে সিলেট বিভাগে সবচে’ বেশি করোনার নমুনা সংগ্রহ হয় হবিগঞ্জ জেলায়।

হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আশরাফ উদ্দিন, ইমতিয়াজ তুহিন অনেক কষ্ট করছে। রবিবারও একদিনে ৬০/৭০টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। সে দায়িত্ব পালন করে বলেই আমরা সব দিক সামলাতে পারছি। কিন্তু ল্যাবে আর কোনো লোক না থাকায় তার ডিউটির রোস্টার শেষ হলেও কাকে দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করব তা নিয়ে টেনশনে রয়েছি।

আপনার মতামত জানান