‘সেলস গার্ল’ থেকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত

শিশুকালেই মাদকসেবী বাবার সংসার ছেড়ে চলে যান তার মা। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর মা ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন উত্তর হেলসিঙ্কির পীরকালা অঞ্চলে একটি সমকামী পরিবারে। সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। সেই পরিবারে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলেও ভালোবাসা ছিল প্রচুর। অর্থাভাবে পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তাই বাধ্য হয়ে পড়ালেখার খরচ চালাতে স্কুল জীবনে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন।

শুধু নিজের লেখাপাড়ার খরচ নয়; পিতৃহীন অভাবের সংসারে রুটি-রুজির অর্থ উপার্জনের জন্য ১৫ বছর বয়সে একটি বেকারিতে চাকরি নেন তিনি। এর পর স্নাতক শেষে একটি প্রতিষ্ঠানে ক্যাশিয়ার পদে যোগ দেন। এত পরিশ্রমের পরও তিনি নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে রাজনীতি শুরু করেন।

এই পরিশ্রমী মানুষটি বর্তমানে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী। তার নাম সানা মারিন। চাকরিজীবনে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করা সানা বর্তমানে ৫৫ লাখ মানুষের দেশ ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। ফিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অ্যান্তি রিনে। গত ৩ ডিসেম্বর এক আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

এরপর ভোটাভুটির মাধ্যমে দলটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সানা মারিন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। সানার আগে মাত্র দুজন নারী দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। সেটিও প্রায় ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। ওই দুই নারী প্রধানমন্ত্রীর কেউই অবশ্য এক বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাই ইউরোপীয় কাউন্সিলসহ পুরো বিশ্বের নজর ছিল সানার ওপর।

সানার রাজনৈতিক দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান পদত্যাগ করলে দলের প্রধানের দায়িত্ব পান সানা। বর্তমানে তিনি ফিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন পাঁচ দলীয় জোট সরকারের প্রধান। নিজের দরিদ্র জীবনের কথা গর্বের সঙ্গেই স্বীকার করেন সানা।

এদিকে চাকরিজীবনে ক্যাশিয়ার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করায় তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সানা মারিনকে ‘সেলস গার্ল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, একজন সেলস গার্ল দেশ পরিচালনা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আমার সং’শয় রয়েছে।

অবশ্য পরবর্তীতে এমন বিব্রতকর মন্তব্যের কারণে ফিনল্যান্ডের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছে এস্তোনিয়া সরকার। তবে এস্তোনিয়ার মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের জবাবে টুইটারে সানা মারিন লেখেন, ফিনল্যান্ডে জন্ম নিয়েছি বলেই আজ আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। এ জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত। এই একজন দরিদ্র পরিবারের শিশু নিজেকে শিক্ষিত করতে পারে এবং তার জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এমনকি একজন ক্যাশিয়ার দেশের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারে। সানা মারিন ফিনল্যান্ডের পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন।

আপনার মতামত জানান