স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশিং – এসপি আক্তার
স্মার্ট বাংলাদেশ: ইংরেজি ‘SMART’ শব্দের প্রতিটি বর্ণের পূর্ণরূপ হলো S = Specific; M= Measurable; A = Achievable; R = Realistic; T = Timely, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’ এর পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে মূলত বোঝায় প্রযুক্তিনির্ভর জীবনব্যবস্থা, যেখানে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সব কিছুই স্মার্টলি করা যাবে। যেখানে ভোগান্তি ছাড়া প্রতিটি নাগরিক পাবে অধিকারের নিশ্চয়তা এবং কর্তব্য পালনের সুবর্ণ এক সুযোগ। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখাকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনোমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি- এই শব্দগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ থিওরিকে বাস্তবে রূপায়ণ করা সম্ভব হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর মূল সারমর্ম হচ্ছে দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ প্রক্রিয়া। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ১. জ্ঞানভিত্তিক ই-অর্থনীতি, ২. উদ্ভাবনী জাতি এবং ৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন-২০২১’ ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় একের পর এক উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের হাত ধরে দেশ আজ বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা।
উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কর্ম পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ। তবে এ যাত্রায় অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। একই সঙ্গে সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মার্ট পুলিশিং
৩ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান ও উপদেশমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ এবং বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলা। তিনি তার বক্তব্যে পুলিশ সম্পর্কে জনগণের ‘ভীতি’ দূর করে ভালো কাজ চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পুলিশের প্রতি ‘জনগণের আস্থা’ অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর যে মূল্যবান কথাটি বলেছেন তা হলো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ হবে ‘জনগণের পুলিশ, শোষকের পুলিশ নয়।পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিটি কথাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী পুলিশের নানাবিধ কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে যথার্থই বলেছেন। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ এবং সেটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা জনসাধারণ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সব আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হবে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো প্রশাসন। আর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে প্রধানত পুলিশ সার্ভিসকেই বোঝানো হয়। পুলিশের ওপর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটাই নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বে পুলিশ জনগণের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত থাকে। যেকোনো সমস্যায় জনগণ পুলিশের সাহায্য কামনা করে। পুলিশ সদস্যদের কাজই হলো জনগণের যেকোনো সমস্যায় সব ধরনের সহযোগিতা করা। অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। মোটকথা, পুলিশ সদস্যরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
উন্নত বিশ্বে সাধারণত ধরা হয়ে থাকে যে সমাজের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলবে। বাকি ১০ ভাগ মানুষ আইনের বরখেলাপ করবে অথবা বিপথগামী হবে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা আইনের আওতায় আনবে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, পুলিশ এই ১০ ভাগ মানুষ থেকে সমাজের ৯০ ভাগ শান্তিকামী মানুষকে রক্ষা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ৯০ ভাগ মানুষ কি আইন মেনে চলে বা চলার মতো পরিবেশ আছে? তবে এ কথা ঠিক, অল্প কিছু মানুষের নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রভাব সমাজে অনেক বেশি পড়ে। পুলিশের কাজ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং কেউ যদি অন্যায়ভাবে আটক হন, তার প্রভাবও বেশি থাকে। সামান্যতম বিচ্যুতিও মানুষকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। পুলিশকে আইনত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার দেওয়া আছে, তবে তা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গতভাবে হতে হবে।
পুলিশের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হবে, সেটা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। প্রতিদিন দায়িত্ব বণ্টনের আগে কর্মকর্তারা পুলিশ সার্ভিসের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করার বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। থানা থেকে শুরু করে পুলিশ লাইনস, পুলিশ ক্যাম্প, বিভাগ-সবখানেই কাউন্সেলিং করা হয়। কাউন্সেলিংকালে পুলিশ সদস্যদের কোথাও তল্লাশি চালাতে হলে কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরনের আচরণ করতে হবে, তা বুঝিয়ে বলা হয়। সাধারণ মানুষকে যেন সম্মান দেওয়া হয়, তাদের প্রতি যেন ভদ্র আচরণ করা হয়।
Smart Policing emphasizes effectively using data and analytics as well as improving analysis, performance measurement, and evaluation research; improving efficiency; and encouraging innovation. Smart Policing represents a strategic approach that brings more “science” into police operations by leveraging innovative applications of analysis, technology, and evidence-based practices.
Smart Policing হলো তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা। যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যবহার হয় অত্যাধিক। Smart Policing এ অপরাধ মূলক কার্যক্রমের উপাদান গুলোকে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়। অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি সহায়ক । তাছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি কে উৎসাহিত করা হয় অপরাধ মূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তি কে ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে, নির্ধারিত, বাস্তবিক এবং কাঙ্ক্ষিত পুলিশি সেবা প্রদান ই হলো Smart Policing.
Five key components of Smart Policing
1. Performance measurement and resea partnerships,
2. Outreach and collaboration,
3. Managing organizational change,
4. Strategic targeting, and
5. Making better use of intelligence and ot data and information systems.
Collaboration Principles For The Police
• Strong Leadership
• Orient Towards Service
• Transform Training
• Build Community Relationships
• Engage With Diverse Community
• Improve Communication And Messaging
• Underst And Community Perspectives
মানুষের ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ধাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক প্রয়োগ ইতোমধ্যেই লক্ষণীয় প্রভাব ফেলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো প্রেডিক্টিভ পুলিশিং- যা স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে এমন এক ব্যবস্থাকে বুঝায়; যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বয়ংক্রিয়, দ্রুতগতি সম্পন্ন ও তুলনামূলক নির্ভুল ব্যবস্থাপনা। অপরাধ ও অপরাধীকে সনাক্ত করার মাধ্যমে অপরাধ-প্রতিরোধ, বিশ্লেষণ ও প্রতিকারে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। যেমন সিসি ক্যামেরা, সেন্সর ডিভাইস, পূর্বে তৈরিকৃত ডাটাবেজের তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। আইন প্রয়োগের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) সংযোজন একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে যা জননিরাপত্তায় ফোর্স মোবিলাইজেশন, রিসোর্স এলোকেশন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রিম তথ্য প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ ঘরে বসে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি সেবা উল্লেখ না করলেই নয়। আমরা সবাই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সুবিধাভোগী। বিপদ-আপদ, অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা বা যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সেবার জন্য ৯৯৯-এ কল করে থাকি। এটা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং স্বাস্থ্য সমন্বয়ে একটি সমন্বিত সেবা। সেবাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১৭ সালে ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন। এটি তারই মস্তিষ্কপ্রসূত বা উদ্ভাবন। আরেকটি সেবা অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের প্রবাসে চাকরি বা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়। এ সেবাটি চালু হয় ২০১৭ সালে। এ ধরনের আরও বহুবিদ অনলাইন সেবা রয়েছে। ডিজিটাল হওয়ার কারণে সেবা দ্রুত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই কম লাগছে।
একটি তথ্য ও তথ্যভিত্তিক-তথ্যনির্ভর সমাধান পদ্ধতি, যাকে Algorithm বলা হয়ে থাকে কম্পিউটারের ভাষায়। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সেবা প্রদান করার জন্যই এ সেবাটি প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৯৯৯ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করছে। কেউ ৯৯৯-এ কল করলে কল সেন্টারে একজন অপারেটর (Call Taker) কলটি গ্রহণ করে এবং কলারের চাহিদামতো কল সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউনিট অর্থাৎ থানায় ডেসপাচ্ করে অথবা কনফারেন্সিংয়ের জন্য থানাকে সংযুক্ত করে দেয়। এ ব্যবস্থায় কলারের লোকেশনও জানা যায় (GPS Location)। অতঃপর থানা থেকে সেবা প্রত্যাশীকে সাড়া প্রদান করা হচ্ছে। সাড়া প্রদানের সময় (Response Time) আরও সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত করার লক্ষ্যে পুলিশের মোবাইল পেট্রোল গাড়িগুলোতে মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি) বসানোর কার্যক্রমও সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। ফলে ৯৯৯ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে থানায় ডেসপাচের পরিবর্তে সরাসরি ঘটনাস্থল বা সেবাপ্রত্যাশীর নিকটবর্তী কোনো এমডিটিতে কল ডেসপাচ করলে খুব দ্রুত সাড়া প্রদান করা সম্ভব হবে।
স্মার্ট ৯৯৯, যা ‘স্মার্ট বাংলাদেশের তথা স্মার্ট গভর্নমেন্ট’রই অংশ, তা আসলে কী রকম হবে? ডিজিটাল ৯৯৯ যখন স্মার্ট ৯৯৯ হবে তখন কোনো অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, বা অপরাধ, যেমন-হাউজ ট্রেসপাসিং, যৌন হয়রানি ইত্যাদিসহ যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে আর কল করতে হবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সমৃদ্ধ যে কোনো IOT (Internet of Things)-এর আশপাশে কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সেবার জন্য সংকেত বা কোনো অ্যালার্ম স্মার্ট ৯৯৯ কমান্ড সেন্টারে পাঠাতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও সাপ্তাহিক ছুটি উদযাপন করতে গিয়েছেন বা আমরা যা সচরাচর করি- ঈদ, পূজার বড় ছুটি পেলে পরিবারের সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যাই। বাসায় কেউ থাকে না। সেক্ষেত্রে আপনার বাসায় যদি IOT নামক ডিভাইসটি থাকে আর তার যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকে, তবে আপনার অনুপস্থিতিতে যে কেউ আপনার বাসা-বাড়িতে ঢুকলে বা বাসায় কোনো দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে স্মার্ট ৯৯৯ কমান্ড সেন্টারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল বা অ্যালার্ম বা সিগন্যাল চলে আসবে। শুধু তাই নয়, স্মার্ট ৯৯৯ অবশ্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ কলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে অগ্নিকাণ্ড হলে নিকটবর্তী ফায়ার সার্ভিসকে অথবা কোনো অপরাধসংক্রান্ত হলে নিকটবর্তী ইউনিটকে কল, সংকেত, সিগন্যাল পাঠাবে। সাড়া বা সেবা প্রদান অথবা সাড়া প্রদানকারী ঘটনাস্থলে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলটি লাইভ থাকবে।
আমরা এমন একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল সময় পার করছি যেখানে বিশ্ব প্রতিটি মুহূর্তে প্রযুক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি নিত্য নতুন জটিল সমস্যার সাক্ষী হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিগত বিপ্লব পরিবর্তন করে দিচ্ছে আমাদের ধারণা, প্রস্তুতি ও কাজের ধরনকে। কালের প্ররিক্রমায় আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে প্রবেশ করেছি ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা হয় ৮০ ভাগেরও বেশি। এ দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার জন্য AI সংবলিত Automated Software Application ক্যামেরা এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। মহাসড়কে ইতোমধ্যে সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তদানুসারে স্মার্ট ক্যামেরা মহাসড়ক-সড়কে প্রকাশ্য-গোপনে বসানো যেতে পারে। এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত ক্যামেরা গতিসীমার অতিরিক্ত গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং গাড়ির মালিকের তথ্যভান্ডার (Big Data) বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করতে পারবে। তদুপরি আইনানুসারে এ অপরাধের জন্য নির্ধারিত জরিমানা সরাসরি অভিযুক্ত গাড়ির মালিকের যোগাযোগের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর বা ই-মেইলে পাঠিয়ে দিতে পারবে। পেমেন্ট সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটা মুলতুবি দেখাবে। তাছাড়া ট্রাফিক সিগন্যাল যদি Automated করা যায়, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানজট শনাক্ত করে তদানুসারে ট্রাফিক সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে। ফলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনের জট অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ, পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা তখন ডিজিটাল এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে।
পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের বড় সুবিধা হলো প্রেডিক্টিভ এনালাইসিস। সুবিস্তর তথ্য ভান্ডারের স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনার মাধ্যমে এ আই এলগোরিদম এমন কিছু ঘটনা ও অপরাধের লক্ষণ সনাক্ত করতে সক্ষম যা মানুষের পর্যালোচনা শক্তি দ্বারা অসম্ভব। এই পূর্ব সনাক্তকরণ সক্ষমতা পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কোনো অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই অপরাধ দমনে সাহায্য করবে। এই ক্ষেত্রে এ আই অপরাধীর আচরণ বিশ্লেষণ করে অপরাধ প্রবণ অঞ্চল, অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী রিসোর্স মোবিলাইজেশন ও প্রোএক্টিভ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্রিমিনাল ট্র্যাক ডাটা, মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে থাকে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমাজের ৩০%-৪০% অপরাধ কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে জরুরি সময়ে সেবাপ্রত্যাশীর ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় ২৫%- ৩০% কমিয়ে আনে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মুখমন্ডল সনাক্তকরণ (ফেইস রিকগনিশন) প্রযুক্তি সন্দেহভাজন অপরাধীকে চিহ্নিত করতে ও তার গতিবিধি লক্ষ্য করতে সক্ষম। একই সঙ্গে এই প্রযুক্তি নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান, আত্মগোপনে থাকা অপরাধীকে খুঁজে বের করা ও জনসমাগমে মানুষের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অর্লিপ্স শহরের পুলিশ অপরাধী, গাড়ি ও স্থান সনাক্ত করতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার করে। রাশিয়া ও চায়নাতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত।
স্মার্ট বাংলাদেশের পাশাপাশি স্মার্ট সিটি বিষয়টিও এখন বহুল আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। স্মার্ট সিটি নাগরিকদের দ্রুত সেবা প্রদান যেমন নিশ্চিত করবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে। স্মার্ট সিটি ব্যবহার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত স্মার্ট পুলিশিং অপরাধী শনাক্ত-চিহ্নিতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। অপরাধের ঘটনাস্থল এবং অপরাধী দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। পৃথিবীর উন্নত দেশের শহরগুলোতে সিসি টিভি বসিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। সন্দিগ্ধ বা কোনো অপরাধী অথবা অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে ইন্টেলিজেন্ট ক্যামেরার সাহায্যে সহজেই শনাক্ত করতে পারে। আর এর পেছনে কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেটেড সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। ২৪/৭ মনিটরিংয়ের ফলে অপরাধীদের নির্বিঘ্ন চলাচল অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং অপরাধ সংঘটনের মাত্রা কমে যায়। এ নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং ব্যবস্থায় একটা প্রতিরোধমূলক প্রভাব থাকে। অপরাধী যখন জানে যে, অপরাধ করে পার পাবে না তখন এমনিতেই অপরাধের হার কমে যায়।
নিরাপদ ও উন্নত শহর বাস্তবায়নে স্মার্ট পুলিশিংয়ের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয়, গতিশীল, নির্ভুল, নিরাপদ ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে বিশ্ব্যব্যাপী নানান প্রদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দি এআই গ্লোবাল সার্ভেইল্যান্স (এআইজিএস) এর ২০১৯ এর তথ্যমতে ৫৬টি দেশ ইতোমধ্যে নিরাপদ শহর গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছে। এ আই প্রযুক্তির সাহায্য শহরের রাস্তায় চলমান সব গাড়ির তথ্য সংগ্রহ, ট্রাফিক ফ্লো সিমুলেশন, যানজটের পরিমাণ ও রুট ট্র্যাকিং পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। যার ফলে জনসাধারণের যানজটের ভোগান্তি হ্রাস ও সময়-অর্থ সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল, ফিটনেস বিহীন গাড়ি সনাক্তকরণ, যত্রতত্র পার্কিং, খেয়ালখুশিমতো রাস্তা পারাপার সহ সব অসংলগ্ন ও আইন বহির্ভুত কার্যক্রম রোধ করা সম্ভব হবে। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের বাস্তবিক তথ্যের উপর একটি সুবৃহৎ ডাটা সেট তৈরি করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভার্চুয়াল কার্যক্রম ও নির্ভরতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। যেহেতু সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি খুবই সংবেদনশীল তুলনামূলক নতুন, তাই এই অপরাধ দমনে, প্রতিকারে ও জনসচেতনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এ আই প্রযুক্তি খুব দ্রুত অসঙ্গতি সনাক্ত করতে ও তড়িৎ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে সম্ভাব্য ক্ষতি প্রতিহত করতে সক্ষম। এই প্রোএক্টিভ ব্যবস্থাপনা দেশের ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে স্বয়ংক্রিয় পাহারাদার হিসেবে কাজ করে। সাইবার সিকিউরিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে কাজের ব্যাপকতা ও উপযোগিতায় একে অপরের পরিপূরক।
অধিকন্তু, স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে কাজের ব্যাপকতা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সুষ্ঠু মানবসম্পদ ও সম্পদ বরাদ্ধ (রিসোর্স এলোকেশন ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে পেট্রল রুটস অপটিমাইজেশন, লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা ও মাঠ প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় এ আই এলগোরিদম ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটি শুধু সেবা প্রদানে গতিশীলতাই আনে না বরং একই সঙ্গে সেবার মানউন্নয়ন ও জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করে। ২০১৫ সালের দিকে ৮১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান কোনো না কোনো ভাবে হত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করতেন। পরবর্তীতে রিও দি জেনেরিওর পুলিশ হত্যার ঘটনা ও হুমকি পর্যালোচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয় এবং উক্ত অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হোন।
আমাদের দেশের বিদ্যমান পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বিশ্বের সব জনবহুল দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য উদহারণ স্থাপন করবে। স্বয়ংক্রিয় ও দ্রুত সনাক্তকরণ, সাড়াদান ও প্রতিকারের এই সক্ষমতা সামাজিকভাবে অপরাধ দমন ও বিস্তাররোধে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে ডাটা ড্রিভেন পর্যালোচনার মাধ্যমে এআই প্রদত্ত ভবিষৎমুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিকভাবে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে যা একটি সুষ্ঠ, সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থার দিকে আমাদের নিয়ে যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ শতভাগ না হলেও বহুলাংশেই ডিজিটাল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। দেশের থানাগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাটাবেজের আওতায়। অপরাধ তদন্ত, ময়নাতদন্ত, অপরাধী শনাক্তকরণেও ব্যবহার হচ্ছে ডিএনএ-ফরেনসিক বিশ্লেষণসহ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। স্বল্পসময়ে অপরাধীরা ধরাও পড়ছে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনীকে সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হচ্ছে।
মোটকথা, অপরাধ করে পার পাবে না কেউ পুলিশের হাত থেকে, তা সে যে ধরনের অপরাধই হোক না কেন। তবে এসবের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য থাকতে হবে তথ্য প্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, দক্ষ জনবল, স্ট্রাইকিং ফোর্স, অত্যাধুনিক যানবাহন, ট্যাকটিক্যাল বেল্টসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিসহ অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারসহ এসবই যুক্ত করতে হবে পুলিশ বাহিনীতে।
স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশিং হবে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ, বিপণন থেকে শুরু করে সেবা প্রদান সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। পরিবর্তিত এ প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে স্মার্ট পুলিশিং হবে একমাত্র নিয়ামক। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে একটি আধুনিক, দক্ষ, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পুলিশ গঠনে বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তদুপরি আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বাহিনীর সদস্যদের অধিকতর প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট পুলিশ ও স্মার্ট পুলিশিং ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি গ্রহণের এখনই সময়। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশও হবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর একটি আধুনিক স্মার্ট পুলিশ।
লেখক: পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ।
সুত্র : যুগান্তর
আপনার মতামত জানান