এমপি শাজাহান খানের বাসায় বৈঠক, ৩৭ প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অব্যাহতি
আঞ্চলিক প্রতিনিধি :
মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপকে জয়ী করতে শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান। তিনি মাদারীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী শাজাহান খানের ছোট ভাই। নিজ বাসভবনে বৈঠকে শাজাহান খান নিজেও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া ৩৭ জন শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, গত সোমবার সকালে নৌকার প্রার্থী শাজাহান খান ৩৭ জন শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে শাজাহান খানের ভাই ওবাইদুর রহমান খান ও কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ওবাইদুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা-৩ আসনের (মাদারীপুর-৩) বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিবেন এবং নিকট আত্মীয়দের নৌকার পক্ষে কাজ করার আহবান জানাবেন। ৩ আসনে ভোটার উপস্থিত নিশ্চিত করবেন এবং তিনের বাইরে যারা আছেন তাদের নিকট আত্মীয়দের নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান হঠাৎ আমাদের তাদের বাসায় ডাকেন। তিনি আমাদের সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি।
সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে। কিন্তু সেটা না হয়ে এমপি মহোদয়ের বাসায় মিটিং হয়েছে। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘ভোটারদের সাথে না পেরে এবার নির্বাচনী দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাজাহান খান তার নির্বাচনী এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্ট করার অপচেষ্টা করছেন। যেহেতু সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন আমাদের মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। তাই সে সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।’
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ৩৭ শিক্ষকদের একটি প্যানেলকে রিটার্নিং কর্মকর্তা অব্যাহতি দিয়েছেন। এর আগে ওই শিক্ষকেরা এক প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
ওই ভিডিও সম্পর্কে ওবাইদুর রহমান খান বলেন, ‘শিক্ষকদের তিনটি গ্রুপ তো ভাগ করা। তারা অনেক দিন ধরেই আমাকে বলছিল, তিন গ্রুপকে এক করে দেওয়ার জন্য। শিবচরে শিক্ষক কল্যাণ সমিতি করে এক করেছে, মাদারীপুর সদরেও এক করে দেন। আমি তাদের বলেছিলাম, ইলেকশন সামনে পরে করে দেই। তারা এখনি এক হতে চাইলে আমি তাদের আসতে বলেছিলাম। পরে উনারা (শিক্ষক) আসে। তারপর প্রসঙ্গক্রমে নির্বাচনের কথা উঠছে, মূলত সাংগঠনিক আলোচনাই হয়েছে। আর নির্বাচনের ব্যাপারেও কাউকে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে বলা হয়নি। নিকট আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের ৩ আসনের প্রতি একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে চাইতে বলা হয়েছে। এটা কোনো নির্বাচনী প্রচারণা না। তা ছাড়া আমি বলেছি, ১-২ আসন সহজ আছে, ৩ একটু কঠিন, আপনাদের (শিক্ষক) আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তাদের বলে দিন।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান জানান, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের এমন একটি ভিডিও নজরে আসার পরেই তদন্ত করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৩৭ জন শিক্ষককে নির্বাচনী সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কোনো শিক্ষক ছিল কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সভায় যে আলোচনা হয়েছে, তা অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পরে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত জানান