একই গাড়ি বার বার বিক্রি, কোটিপতি ইউপি চেয়ারম্যান!

প্রকাশিত



প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জাকির হোসেন (৪৩) নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ- ডিবি। জাকির কুমিল্লার মেঘনার মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

রাজধানীর মুগদা থানার একটি মামলার সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মেঘনা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। প্রতারণা করে প্রায় ৩০০ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংসদ সদস্য (এমপি), পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। এ সময় তার কাছ থেকে ২ মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে এ নিয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিবি। সেখানে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বন্দর থেকে স্বল্পমূল্যে গাড়ি কিনে দেওয়ার আশ্বাসে বিভিন্নজনের কাছ অর্থ নিতেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির। সেই টাকা নিয়ে একই রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের গাড়ি জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করতেন বার বার।

জাকির বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়ি কিনতে পুরো টাকা নিলেও সেটি ডাউন পেমেন্টে কিনতেন জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আবার সেসব গাড়ি রেন্ট এ কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় দিতে করতেন আলাদা চুক্তি। এর বাইরে বিভিন্নজনের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে কখনো কখনো গাড়ি কিনতেন ডাউন পেমেন্টে, আবার কাস্টমারকে না জানিয়েই নিতেন ব্যাংক লোন। সেই টাকা ভাড়ায় খাটানোর কথা বলে চুক্তির পর কয়েক মাস ঠিকমতো অর্থ পরিশোধ করতেন তিনি। তবে কয়েক মাস পর থেকে তিনি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতেন। তাঁর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এভাবে অনেকেই ভুক্তভোগী হয়েছেন।

অভিনব এ পন্থায় অন্তত ৩০০ জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা জাকির হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার জাকির হোসেন কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানাধীন ২ নম্বর মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর ডিএমপির মুগদা থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়। পরে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম মামলাটির ছায়া-তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাকিরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, জাকির চেয়াররম্যান কখনো ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে গাড়ি কিনতেন ডাউন পেমেন্টে। আবার ব্যাংক থেকে গাড়ির বিপরীতে কাস্টমারকে না জানিয়ে নিতেন ব্যাংক লোন। আবার কোনো ক্রেতাকে শুধু ইঞ্জিন নাম্বার দিয়ে মাসিক কিস্তি পরিশোধের ভিত্তিতে কিছুদিন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করতেন। পরবর্তীতে কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করতেন জাকির। পূর্বের বিক্রি করা গাড়ি স্বল্প মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।

কয়েকজন এমপি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে চেয়রম্যান জাকির প্রতারণা করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে রেন্ট-এ কারে চুক্তিও করেন তিনি। সেই অনুযায়ী প্রতিমাসে ঠিকই টাকা দেন। এতে করে তাকে বিশ্বাস করেছেন সবাই।

ডিবি জানায়, জাকির ২০০৮ সালে ঢাকায় এসে গাড়িচালনার প্রশিক্ষণ নেন। পরে তিনি ঢাকায় লেগুনা চালানো শুরু করেন। দুই বছর লেগুনা চালানোর পর তিনি একটি গাড়ি কেনেন। কুমিল্লার তাঁর সঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই কর্মকর্তা তাঁকে একটি গাড়ি কিনতে ভাড়া দেন। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পরিচয় হয়। এই সখ্যের সূত্র ধরেই অল্প দামে গাড়ি কিনে ভাড়ায় খাটানোর প্রলোভনের ফাঁদে পান দেন অনেকেই। তাঁদের একটি বড় অংশ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া তিনজন এমপিও কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন জাকির। কুমিল্লায় তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জমি কিনেছেন। ঢাকায় তাঁর একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে। সম্পদের মালিক হওয়ার পর তিনি কুমিল্লায় স্থানীয় পর্যায়ে যুবলীগের পদ বাগিয়ে নেন। একপর্যায়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।

আপনার মতামত জানান