চাকরির সাক্ষাৎকারে ৫শ টাকা, যোগদানে ৬ হাজার
বিভিন্ন পদে চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী কেউ যোগাযোগ করলে তাকে সাক্ষাৎ করতে বলা হতো।
সাক্ষাতে ফর্ম পূরণের নামে আদায় করা হতো ৫শ টাকা। কিছুদিন পর কথিত চাকরিতে যোগদানপত্র দেওয়ার নামে আরও ৫-৬ হাজার টাকা আদায় করা হতো চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে।
দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও কাউকে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি চক্রটি।
রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার একটি বাসায় তথাকথিত এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের অফিস থেকে চক্রের অন্যতম সদস্য মোসা. সালমা আক্তার মুন্নিকে (২১) আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
এ সময় তার কাছ থেকে ১টি সিপিইউ, ২টি মোবাইল ফোন, ভুয়া নিয়োগপত্র, ২০টি ভিজিটিং কার্ড এবং ৮ পাতা চাকরির বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি বলেন, আটক সালমা আক্তার একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এনএএইচ সিকিউরিটিজ নামে কথিত ওই কোম্পানিটি তাদের অফিস থেকে চাকরিপ্রার্থীদের ফোন দিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আসতে বলত।
চাকরি প্রার্থীরা ইন্টারভিউর জন্য অফিসে আসার পর তাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ ৫শ টাকা নেওয়া হয়। পরে চাকরিতে যোগদানের আগে পদ অনুসারে ৫-৬ হাজার টাকা জামানত বাবদ আদায় করা হতো। পরবর্তীতে কেউ ওই কোম্পানিতে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে অন্তত ১০ জন নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে। নতুন প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে তাদের বেতন দেওয়া হবে মর্মে আশ্বাস দেওয়ে হতো।
আটক সালমা গত ৬ মাসে প্রায় ১ হাজার ২৩৯ জন চাকরিপ্রার্থীকে তাদের কোম্পানির নিয়োগ ফরম পূরণের নামে ১১ লাখ ২৬ হাজার ২শ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু গত ৬ মাসে তারা কোন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে মর্মে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সালমা আক্তার মুন্নির শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সঠিক প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। তবে, তিনি এইচএসসি পাস বলে জানিয়েছেন। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় সূত্রে ২০২০ সালের শুরু থেকে এই প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা শুরু করেন।
হাবীবের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, আটক সালমার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা হাবীবকে ধরার জন্য একটি অফিসে অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, শিগগিরই আমরা তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সব মহলের সচেতনতা জরুরি। গণমাধ্যমে বিষয়গুলো প্রচার হলে মানুষ জানতে পারবে। এছাড়া আমরা আশা করি, জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারের নির্ধারিত বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করবে।
আপনার মতামত জানান