৯ বছরে ৯০ দিন পৌরসভায় মেয়র, উন্নয়ন বঞ্চিত সোনারগাঁ পৌরবাসী

প্রকাশিত

সোনারগাঁ পৌরসভায় প্রায় ৯বছরে ৯০ দিন অফিস করেছেন কিনা এটাও সঠিক বলতে পারেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে সোনারগাঁ পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া ২০১১ থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ৯বছরে তিনি ৯০ মাত্র দিন পৌরসভায় অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানান পৌরসেবাপ্রার্থীরা। এর মধ্যে বেশি সময় তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকেন। মেয়রের অনুপস্থিতির কারণে অনেক উন্নয়ণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সোনারগাঁ পৌরবাসী এমনটাই দাবি তাদের। তবে তিনি প্রত্যেক মাসিক সভায় উপস্থিত না থাকলেও দু-এক মাস পরপর সভায় উপস্থিত থাকেন বলে পৌরসূত্র নিশ্চিত করেছে।

১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার মাগরিবের সময় মেয়র মোঃ সাদেকুর রহমান বাঁশবাহী একটি নসিম-করিমনের (ভটভটি) এক চালককে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সারাদেশে সমালোচিত হয়েছেন।  এ ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বর সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে সোনারগাঁয়ের গোয়ালদী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে আহত ভটভটি চালক জামালের পরিবারের সহায়তায় মেয়রের লোকজন তাকে মুচলেকা দিয়ে ছারিয়ে আনে।

২০১১ থেকে ২০১৫ এবং বর্তমান মেয়াদের প্রায় চার বছরে পৌর মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করলেও তার ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
জানা যায়, মেয়র অনুপস্থিতি কিংবা অসুস্থতাহেতু বা অন্য কোন কারণে মেয়র দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের ধারা ২০ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার/কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত প্যানেলের কোন সদস্য মেয়রের সকল দায়িত্ব পালন করবেন।

এ ব্যাপারে প্যানেল মেয়র নাছিম পাশা জানান,প্যানেল মেয়র হল বতমান মেয়র না থাকাকালীন যে জনপ্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করেন। সরকার অথবা জনপ্রতিনিধিরা প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করতে পারেন। আমি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত প্যানেল মেয়র হলেও আমার অফিসিয়াল কোনো দায়িত্বও নেই। ফাইলপত্র, জন্ম-মৃত্যু, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিকত্ব সনদ এসব অগ্রিম স্বাক্ষর করে রেখে যান মেয়র। এরপরও যদি প্রয়োজন হয় তবে পৌরসচিব সামসুল আলম ছায়া মেয়র হিসেবে সকল কাজ সম্পন্ন করেন। সেবার জন্য নির্বাচনে আসলেও খুব বেশি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড না থাকায় সারাদিন পৌরসভায় বসে কাটিয়ে দিই।

জানা যায়, পৌরসচিব নিয়মিত অফিস করেন না। তিনি সপ্তাহে দু-তিন দিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করেন। ৪টার আগে অফিসের জরুরি ফাইলে স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে পৌর কর্মচারীরা তার বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে অসেন। সরেজমিন পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, সচিবের কক্ষে তালা ঝুলছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌর হিসাবরক্ষক এনামুল হক জানান, সচিব স্যারের অ্যাজমা আছে তাই তিনি বিকেলে অফিস করেন।
পৌরসভার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকমতো অফিস করেন না। পৌর মেয়র রাজধানী ঢাকায় থাকেন। মাঝে-মধ্যে সোনারগাঁয়ে আসেন। এ কারণে পৌরবাসী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

ভুক্তভোগীরা জানান, পৌরসভা থেকে জন্ম, মৃত্যু ও ওয়ারিশ সনদ নিতে আসলে অনেক ভোগান্তিতে পরতে হয়। সেবা নিতে িএকজন জানান, তার দুই মেয়ের জন্মনিবন্ধনের জন্য তিন ধরে পৌরসভায় আসলেও নিববন্ধন কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা অফিসে না থাকায় তিনি জন্মনিবন্ধন করতে পারছেন না।

কৃষ্ণপুরা গ্রামের হাজি পিয়ার আলীর সাহেবের ছেলে সুইডেনপ্রবাসী আরিফুল ইসলাম জানান, আমার বাবা সরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর পেনশন ও অন্যান্য কাজের জন্র মৃত্যু সনদ অতি জরুরী হয়ে পরেছে কিন্তু আমার বাবার মৃত্যু সনদের জন্য আজ নিয়ে তিন দিন আসলাম। সকালে আসলেও সচিবের জন্য বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

জানা যায়, পৌরসভার যাত্রা শুরু ২০০১ সালে। আমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ও ঐতিহাসিক পানাম নগর নিয়ে পৌরসভাটি গড়ে উঠেছে। ২৪ হাজার ৪৭৫ জন ভোটারের এ পৌরসভাটি দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা লাভ করলেও রয়েছে অনেক সমস্যা। অধিকাংশ রাস্তাঘাট বেহাল অবস্থা, পানি সরবরাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে সামান্য বৃষ্টি হলে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে।

পৌরসভার নিজস্ব গাড়ি রাখার কোনো গ্যারেজ না থাকায় সরকারি কয়েক কোটি টাকার ভেকু, ড্রেজার, ট্রাক রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ জানান, পৌরসভার আয়ের প্রধান উৎস ভেকু, ড্রোজার। কিন্তু পৌরসভার নির্দিষ্ট জমি না থাকায় গ্যারেজ করতে পারছি না। তবে অতি শিগগিরই একটি গ্যারেজ করতে পারব বলে আশা করি।

পৌরবাসী অভিযোগ করে বলেন, মেয়র সাহেবের অনুপস্থিতে একটি চক্র পৌরসভাকে ব্যবহার করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঠিকাদারি কাজ নিয়েও মানুষকে হয়রানি করছে। পৌরসভার প্রতিটি কাজ সঠিক তদারকির অভাবে ঠিকাদারের খেয়ালখুশি মতো নিম্নমানের সামগ্রী কাজ করেন। তাছাড়া একটি কাজ প্রায় দুই বছরে সমাপ্তির মুখ দেখে না। এতে সাধারন জনগন চনম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের জনগন জানান, ভোট নেওয়ার সময় বার বার আসলে ভোটের পরেই মেয়র হাসপাতালে থাকেন। উদ্বব থেকে পানামের রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। অধিকাংশ রাস্তার বেহাল দশার কারনে অতিষ্ট পৌরবাসী। আরো জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই সাহাপুর এলাকাটি পুরো পানিতে তলিয়ে থাকে। তা ছাড়া সোনারগাঁয়ে ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে এখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেই। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধনেও নেই কোনো উদ্যোগ।

দিঘীরপাড় গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, বিশ্ব কারুশিল্প শহরের স্বীকৃতি পাওয়া সোনারগাঁয়ের পানাম নগরী ও বাংলাদেশ লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশনের একমাত্র রাস্তাটিসহ অনেক রাস্তার ইট, বালু, পাথর ও সুড়কি সরে গিয়ে অনেক সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পৌরসচিব সামসুল আলম জানান, আমি নিয়মিত অফিস করার চেষ্টা করি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাঝে-মধ্যে এর ব্যতিক্রম ঘটে।

আপনার মতামত জানান