২০১৯ সালে সোনারগাঁ ছিল মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য

প্রকাশিত

মাদকব্যবসায় বাঁধা কিংবা প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদকারীর উপর হামলা, মামলাসহ নেমে এসেছে নানা দূর্ভোগ। হামলার প্রতিবাদে মামলা করলে প্রাননাশের হুমকি। নিজের ও পরিবারের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে থেকেছে  মাদকব্যবসায় প্রতিবাদকারীদের। ২০১৯ সালে সোনারগাঁয়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা হলেও থানা পুলিশের অভিযানে ধরা পরেনি মাদকের বড় কোন চালান। বড় বড় মাদকের চালান ধরেও উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার প্রচুর সংবাদ ছাঁপা হয়েছে মিডিয়ায়। অভিযুক্ত পুলিশ বহাল তবিয়তে। দুই বছরের অধিক সোনারগাঁ থানায় পোষ্টিং আছে এমন পুলিশরাই এসব মাদকব্যবসায়ীদের সাথে জড়িত বলেও জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেয়ায় উপজেলার ছোট কাজীরগাঁও গ্রামের নাজমুল ইসলাম বাপ্পীসহ তার পরিবারের তিনজনকে, সোনাপুর এলাকার ব্যবসায়ী আঃ রউফ, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জের ফয়সাল, পিরোজপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি রুহুল আমিন, উলুকান্দী মাদ্রাসা এলাকায় গাজী হারিছুল (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ ও কান্দারগাঁও গ্রামে একই পরিবারের সাত জনকে পিটিয়ে আহত করেছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা।এছাড়াও আরও অনেকে মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিযাতিত। মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় মাদকব্যসায়ীরা বাধাদানকারীদের দেশীয় অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে, পিটিয়ে আহত করায় থানায় মামলা দিলেও সোনারগাঁ থানা পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সোনারগাঁ থানা পুলিশকে ধোকা দিতে একাধিক দালাল থানা পুলিশের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। তাদের কথায় থানা পুলিশ ওঠে বসে এমন কথাও তারা বিভিন্ন মহলে প্রচার করেন। তাছাড়া তাদের হোন্ডার পিছনে সব সময় একজন না একজন পুলিশ থাকবেই। সোনারগাঁ থানার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই তার প্রমান মিলবে বলে জানান একাধিকসুত্র।

মাদক ব্যবসায়ী বাধা দেয়ায় ব্যসায়ীরা নাজমুল হোসেন বাপ্পীর উপর হামলা করে তাকেসহ তার পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে। ভুক্তভোগীদের পরিবার এর প্রতিকার ও নিরাপত্তার আশায় থানায় মামলা করে হুমকির মুখে কউ কউ বাড়িছাড়া ছিলেন। এব্যাপারে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ছিল ভাবলেষহীন।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে সোনারগাঁ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বানিজ্য অভিযোগ উঠেছে বার বার। সোনারগাঁয়ে পুলিশের একাধিক ক্রাইমজোন রয়েছে বলেও জানা যায়। যেখানে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী, অপরাধী এমনকি নিরিহ মানুষদের ধরে এনে ঘুষ আদায় করে ছেড়ে দেয়। পুলিশের ক্রাইম জোনের মধ্যে অন্যতম হলো সোনারগাঁ থানা সংলগ্ন তিনটি ইটের গদি। যে কোন আসামী ধরে কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা এখানে গাড়িতে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় অন্যথায় নিরিহ মানুষকে ডাকাতি কিংবা মাদক ব্যবসায় চালান করে দেয়। পানাম সিটি, মতিন সাবের বাগ, ষোলপাড়া, গাবতলী, মনারবাগ, পাইলটস্কুল, খংসারদি আমানের বালুর মাঠ, বৈদ্যরবাজার, পিরোজপুর ইউনিয়য়ন কাউন্সিল, পাওয়ারপ্লান্টের মাঠ, নয়াগাঁও, দুধঘাটা, নয়াপুর, শম্ভুপুরাসহ  ১০টি ইউনিয়ন ও একটি প্যেরসভায় ১৫০টির মতো পুলিশের ক্রাইমজোন আছে যেখানে অবাধে চলে পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্য।

গিট্টু  হৃদয়ের ক্রসফায়ারের চারমাস আগে রাত তিনটায় কোরবানপুর থেকে প্রচুর মাদকসহ গ্রেফতার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। পরে থানা সংলগ্ন ইটের গদিতে রেখে মোটা অংকের টাকার বিনিময় করে ওয়ারেন্ট মামলায় চালান দেয়ার অভিযোগ পোওয়া গেছে।

আলোচনায় ছিলো পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে কয়েকবার মাদক উদ্ধার অভিযান। পুলিশের কয়েকটি অভিযানই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পিরোজপুরের মাদক ব্যবসায়ী রবকে গ্রেফতার করতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া এবং জব্দকৃত মাদক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, একই থানায় যারা বার বার বদলী হয়ে আসেন তাদের শেল্টারেই মূলত মাদক ব্যবসা চলে। এ বিষয়টি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। একটি থানায় একজন পুলিশ অফিসারের সাথে মাদকব্যবসায়ীদের প্রথম ছয়মাসেই সখ্যতা গড়ে ওঠে। তাই পুলিশদের একই থানায় সর্বোচ্চ দুই বছর রাখলে অপরাধ প্রবনতা অনেকাংশে কমে যাবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে জায়েদুল আলম যোগদান করে পুলিশের রদবদল মানুষের মনে মাদক ও অপরাধ নির্মূলের আশার সঞ্চার করেছে। এবার হয়তো নারায়ণগঞ্জ তথা সোনারগাঁয়ে মাদক, সন্ত্রাস ও অপরাধ প্রবনতা কমবে।

আপনার মতামত জানান