১৮ কেজি মাংস ও ১০০ ডিম খাওয়া সেই বাবুল আর নেই

প্রকাশিত


রাজশাহী প্রতিনিধি

এক বসায় ১৮ কেজি মাংস ও ১০০ ডিম খেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বাবুল আকতার। শুধু খাওয়া নয়, পাশাপাশি ব্যতিক্রম নানা ধরনের কাজ করে তিনি গণমাধ্যমের শিরোনামেও এসেছেন। তাঁকে একনজর দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসতেন অনেক মানুষ। সেই বাবুল এখন কেবলই গল্প।


গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় নিজ বাড়িতে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ৫০ বছর বয়সী বাবুল আকতার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাত ও ব্যথার রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক পরীক্ষায় এক মাস আগে কিডনি ও হৃদ্‌রোগ ধরা পড়ে তাঁর। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। বাবুল আকতার উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত খেলাফত উল্লাহ সরকারের ছেলে।


আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।

জানা যায়, ২০১৮ সালে বাবুল আকতার ৪ ঘণ্টা ১৮ মিনিটে ১৮ কেজি খাসির মাংস খেয়ে রেকর্ড করেন। পরে ১০০টি মুরগির ডিম এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। তিনি খেতে বসলেই ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের একটি কাঁঠাল নিমেষেই খেতে পারতেন। ত্বরিত গতিতে ১১ মণ ওজনের কাঠের গুঁড়ি একাই কাঁধে তুলে নিয়ে বহন করতেন। এক দৌড়ে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতেন স্বাভাবিকভাবে। একটানা চার ঘণ্টা সাঁতার দিয়েও ক্লান্তি বোধ করতেন না। ১২৫ কেজি ওজনের বিশাল দেহ নিয়ে অনায়াসে গাছে উঠে ডাব পেড়ে খেতেন। তবে কারও সঙ্গে বাজি ধরে এসব কাজ করতেন তিনি। বেশি খাবার খাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তাঁকে দেখতে আসত। এতে করে এলাকায় তাঁর পরিচিতি ছিল খাদক বাবুল হিসেবে।

খাদক বাবুল আকতারের স্ত্রী লাইলা বেগম বলেন, ‘আমার শাশুড়ি বলতেন, সে ১৯৭৩ সালে জন্মের পরপরই নাকি পৌনে এক কেজি করে গরুর দুধ পান করত। তারপর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি আরও বেশি খাবার লাগত। প্রাপ্ত বয়সে প্রতিদিন সকালের নাশতায় পাঁচ কেজি গরুর মাংস খেত। তা না হয়ে যদি ডিম হতো তাহলে ২৫ থেকে ৩০টি মুরগির ডিম দিয়ে নাশতা করত। এটা ছিল তার স্বাভাবিক খাবার। আর কেউ বাজি ধরলে তো কোনো কথা ছাড়াই ১০ থেকে ১৫ কেজি মাংস ও ৫০ থেকে ১০০টি ডিম, বড় সাইজের ১০০ কলা খেয়ে ফেলত। বয়স বৃদ্ধির পর শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কথামতো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল।’

মেয়ে যূথী খাতুন বলেন, ‘বাবা একজন শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। বিশাল দেহ আর অস্বাভাবিক খাদ্য ভক্ষণ করায় তাঁর নাম ওঠে ‘খাদক বাবুল আকতার’, যাঁর স্বাভাবিক খাদ্যতালিকায় ৫ কেজি গরুর মাংস লাগত। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবেই খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর ভবিষ্যৎ ভেবে পরিবারের লোকজনও সেভাবে আর খেতে দিত না।’

ছেলে নবাব আলী বলেন, ‘২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনে প্রথম বাবা বন্ধুদের সঙ্গে রাজধানীর ঢাকায় গিয়েছিলেন। ওই দিন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি রেস্তোরাঁর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে শতাধিক লোকের মধ্যে ১৮ কেজি খাসির মাংস এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। এমন অবাক করা খাওয়া দেখে ধরা পড়ে যান অনেক গণমাধ্যমের চোখে। সে সময় অদ্ভুত এই খাওয়ার কাহিনি তুলে ধরে “খাদক” “ভোজনরসিক”সহ রংবেরঙের নামে তাঁকে প্রচার করা হয়েছিল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।’

মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবুল আকতারের অনেক জমি ছিল। সাংসারিক ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতেন না। জমি বিক্রি করে খেয়ে প্রায় শেষ করেছেন। তিনি খুব মিশুক প্রকৃতির লোক ছিলেন। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে শারীরিক সমস্যার কারণে পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল।’

আপনার মতামত জানান