সোনারগাঁ যাদুঘর আঁধারে আলোরপ্রভা (ভিডিও সহ)

প্রকাশিত

সব ঋতুর সৌন্দর্যের মোহনা যেন সোনারগাঁয়ের যাদুঘর। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। গ্রীস্মের তাপদাহে প্রকৃতি যেন আরো বেশী উজ্জল। আরো বেশী রঙীন। সবুজ পাতা মাড়িয়ে লাল কৃষ্ণচুড়ার ফুলে প্রকৃতি সেঁজেছে খুনিলালের অমায়িক রূপে। খুনিলাল কারো চোখে মায়ার কাজল পরাতে পারে তা সোনারগাঁয়ে না আসলে অনুভব করা সম্ভব না। হলুদ, কমলা রঙের ফুল ও চোখে পড়ে। স্থানীয় ভাষায় বানরের লাঠি নামক (সোনালু) হলুদ ফুল পুকুরের গাঁ ছুয়ে আছে।

বর্ষায় আগমনীতেই কদম্বের ঘ্রানে মাতোয়ারা হয় চারিদিক। চাঁদের আলোয় সোনারগাঁয়ের বড় সর্দারবাড়ি জ্বলজ্বল করে। মিটিমিটি আলোয় পুকুর ঘাটের দুইপাশে চিরচেনা সেই ঘোড়ার আরোহীরা এখন অতন্ত্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চকচকে বিশাল ফটকে। অতীতের স্থাপত্যের কারুকার্য দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের পর নতুন যৌবন ফিরে পেয়েছে প্রত্ন স্থাপনাটি।

বড় সর্দার বাড়ির যাদুঘরে তিনটি পুরনো ভবনেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশন। ভবনগুলোতে কোনো নাম ফলক না থাকায় কবে তৈরি হয়েছে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় তা হলো, মুসলিম শাসকদের আমলে ১২৯৬ থেকে ১৬০৮ সাল পর্যন্ত সোনারগাঁ বাংলার রাজধানী ছিলো। ধারনা করা হয়, ১৬০৮ সালে মোগল আমলে সোনারগাঁ থেকে জাহাঙ্গীর নগর ও ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরের পূর্বেই বড় সর্দার বাড়ি তৈরি হয়েছে।

রাজধানী স্থানান্তর হওয়ার পর সোনারগাঁয়ের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য কমে যায়। মূল ভবনের পিছনের তিনটি ভবন মোগল আমলের প্রথম দিকে নির্মিত। পুকুরের তিনটি শান বাঁধানো ঘাটের একটি ঘাটে রাজকীয় অংশ। পশ্চিমের রাজকীয অংশের ঘাটে দুটি ঘোড়ার উপর দুজন অশ্বারোহী । মোট ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ভবনের নিচতলায় ৪৭ টি ও দোতলায় ৩৮ টি কক্ষ। দ্বিতল বাড়ি দু’টি ভাগে তৈরি করা হয়েছে। মধ্যভাগে লালরঙের বর্গাকৃতি ভবনটি মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলির কথা মনে করিয়ে দেয়। বানিজ্যিক এ ভবনেই প্রাক ইসলামি, প্রাক মোগল, বার ভূইয়া ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল- এই চারটি ভিন্ন সময়ের স্থাপত্য শৈলির সমাবেশ বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।

বহিশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে ভবনের সিঁড়ি গুলো এতটাই ক্ষীন যে একজন একজন কওর উপরে উঠতে হয়। ভবনগুলো তার অতিত সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা হারাতে বসে। তবে আশির দশকে আংশিক সস্কার করে লোক ও কারুশিল্প যাদুঘরের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। ভবনগুলোর গৌরব্বোজ্জল অতীতকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনতে কোরিয়ার বহুজাতিক কোম্পানী ইয়াংওয়ান গ্রুপ দশ কোটি টাকা বরাদ্ধ করেন। ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বড়সর্দার বাড়ির সংস্কার কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে অবকাঠামোগত সব কাজ শেষ। এখন ভেতরের কক্ষগুলো সাজানের কাজ চলছে।

প্রকল্পের উপদেষ্ঠা স্থপতি রবিউল হোসাইন বলেন, এটি বাংলাদেশের অন্যতমশ্রেষ্ঠ সংরক্ষণের কাজ। যা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মতামত জানান