সোনারগাঁ যাদুঘরে গোপ অধ্যায়ের সমাপ্তি, জনমনে স্বস্তি

প্রকাশিত

ডেইলি সোনারগাঁ :
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ১৭ মে ২০১৯ এ শেষ হলেও তিনি এখনো অবৈধভাবে সরকারী ডাকবাংলোতে বহাল তবিয়তে আছেন। তিনি ১০ বছর আগে যাদুঘরে চুক্তিবিত্তিক নিয়োগ পান। এর পর বার বার চুক্তি নবায়ণ করে তিনি ১০ বছর পার করে দেন। গত ১৭ মে থেকে অতিরিক্ত পরিচালক (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) হিসেবেে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ খোরশেদ আলম। গত ৩ জুন বিসিএস প্রশাসনের উপপরিচালক ড.আহমদ উল্লাহ প্রেষনে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদে দায়িত্ব পান। তিনি কয়েকদিনের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানা যায়।

এদিকে রবীন্দ্র গোপের চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় জনমতে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানান স্থানীয়রা। গোপ ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি লোক ও কারুশিল্পের বিশেষত্ব হারাতে থাকে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন যে গ্রামীন ঐতিহ্য ও লোকাচার রক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্শিবাদপুষ্ট হয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন, রবীন্দ্র গোপ তার বিপরিত দিকে হাটতে থাকেন। তার দায়িত্ব গ্রহনের পর বাঁশ ও কাঠের সেতু, ঐতিহ্যবাহী ছনের ঘর, লোকজমঞ্চ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে বিশাল বাজেট তৈরি করেন শহরের আদলে ছোট ছোট পাকা ব্রীজ, বাঁশ ও বেতের তৈরি কারুপল্পী ভেঙ্গে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কওে তৈরি করেন আধুনিক স্থাপনা যা কারুশিল্পের সাথে একেবারেই বেমানান। ঐতিহ্যবাহী লোকজ মঞ্চ ভেঙ্গে তৈরি করেন রড সিমেন্টের মঞ্চ। অথচ প্রতি বছর লোকজ মেলায় এ মঞ্চটিকে সাজানো হতো বেত, বাঁশ, কাঠের নকশীকাজ দিয়ে।

লোকজ মঞ্চে একসময় জাড়ি, সারি, ভাটিয়ালি, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, লালন, হাসান, ময়মনসিংহ গীতিকা, গীতিনাট্য ও বাউল গানের আসওে হাজার হাজার দর্শক গানে গানে মাতোয়ারা হতো। কিন্তু তিনি আসার পর ক্ষমতার দাপটে বেসুরের গোপ সংগীতের কাছে সব সংগীত পরাস্ত হয়, মুখ ফিরিয়ে নেয় লোকজ গানের দর্শক।

লালন পাঠশালা তৈরি কওে তিনি শিমুদেও বাধ্য করতেন শুধু তার লেখা গান শিখতে, তার গানের তালে নাচ শিখতে। যদি কেউ তার গান না পারত তবে তাকে আর মঞ্চে উঠতে দিতেন না। তাই বাধ্য হয়েই শিল্পীরা মাসব্যাপী লোকজ মেলায় তার গান গাইত। প্রকৃত লোকজ শিল্পীরা তার গান গাইতে অস্বীকার করতো বলে, দীর্ঘ ১০ বছর লোকজ মঞ্চে একই শিল্পী দিয়ে প্রতিদিন তার গান গাওয়ানো হতো, আর এজন্যও তিনি সরকারী তহবীল থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেকে। আযানের সময়ও তিনি তার গানও বাদ্য থামাতেন না, এ জন্য বার বার প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। তার দুই ছেলে এবং ছেলের বৌ এ প্রতিষ্ঠানের বড় শিল্পী। তারা গানের সুর তাল না জানলেও তাদেও দিয়ে গান করিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রবীন্দ্র গোপের পূর্বেও পরিচালকরা ১-৩ বছর দায়িত্ব পালন করে বছওে কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করলেও গোপ ১০ বছর দায়িত্বে থেকে অবসর নেয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানের ফান্ড শূন্য রেখে যান বলে জানা যায়। শিল্পীর রং তুলিকে উপড়ে ফেলে দেয়ালে দেয়ালে সাটানো হয় ডিজিটাল ব্যানার। দেয়াল দশ বছর আগের দেয়ালচিত্র বছওে বছওে চুনকাম কওে নতুন করা হলেও নতুন বাজেটে পুরনো কাজকেই বার বার প্রদর্শন করা হয়েছে।

চুক্তির মেয়াদশেষে কোন আদেশের বলে তিনি ফাউন্ডেশনের সরকারি ডাকবাংলোর থাকছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেখানে থাকি না।

এ পর্বে লোকজ অনাচার ও ঐতিহ্য হারানোর কথা উল্লেখ করা হলো। আগামী পর্বে বিস্তারিত আসছে।

আপনার মতামত জানান