লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব

প্রকাশিত



স্নান লগ্ন শুরু হয় শুক্রবার রাত ৯টা ১১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে। শেষ হবে শনিবার ৯ এপ্রিল রাত ১১টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। স্নানোৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দে আসতে দেখা গেছে ।

মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী স্নানোৎসব চলছে পুরোদমে।

শুক্রবার রাত ৯টা ১১ মিনিটে লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপমুক্তির বাসনায় স্নানোৎসবে মেতে ওঠেন পুণ্যার্থীরা। স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সনাতন শাস্ত্রমতে, ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র হে লোহিত্য আমার পাপ হরণ কর’—এই মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব সহযোগে পুণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেন। লগ্ন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে লাঙ্গলবন্দে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে।

কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী রতন দত্ত (৫৫) সাথে স্ত্রী বাসন্তী দত্ত (৪৭)। রতন দত্তের সাথে আরো এসেছেন একমাত্র পুত্র ও একমাত্র কন্যা । তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, করোনার কারণে দুই বছর স্নানোৎসব হয়নি। তাই এবার পুণ্য লাভের আশায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্নান করতে এসেছেন তিনি। যশোরের রাঘারপাড়ার বাকড়ি রায়ের ভিটা এলাকা থেকে ছেলে ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব চন্দন রায় । তিনি বলেন, ‘পুণ্যের আশায় স্নান করতে এসেছি। এর আগেও কয়েকবার এসেছি। এখানে স্নান করলে ভগবান সব পাপ মোচন করেন।’

এদিকে স্নানোৎসব উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করেছে প্রশাসন। ঘাটগুলোর চারপাশে বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। পুণ্যার্থীদের সচেতন করতে পানির গভীরতা চিহ্নিত করে লাল ড্রাম দেওয়া হয়েছে। স্নান উপলক্ষে সড়কের দুই পাশে অস্থায়ী মেলা বসেছে। নদের কচুরিপানা পরিষ্কার ও প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পুণ্যার্থীরা।

রাজঘাটে আট বছর ধরে পুণ্যার্থীদের মন্ত্রপাঠ করান টিপু চক্রবর্তী। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর পুণ্যস্নান বন্ধ ছিল। এবার শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় অন্যবারের তুলনায় পুণ্যার্থীদের আগমন বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা বলেন, স্নানোৎসবে অংশ নিতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে পুণ্যার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। তাঁর ধারণা, এবার পাঁচ থেকে ছয় লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটবে।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি এম কুদরাত এ খুদা গণমাধ্যমকে বলেন, সুষ্ঠভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুণ্যার্থীদের জন্য ১৮টি স্নানঘাট সংস্কার করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৪৭টি নলকূপ ও ২৫টি পাঁচ শ লিটারের পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। এ ছাড়া এক শ অস্থায়ী টয়লেট ও স্নানঘাটে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত কাপড় পাল্টানোর কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, কেউ যাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য দেড় হাজারের বেশি পুলিশ, আনসার ও বিশেষায়িত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো লাঙ্গলবন্দ এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ও সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।

আপনার মতামত জানান