রোজার উপকারিতা

প্রকাশিত



আল্লাহপাকের আদেশ পালনার্থে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা রমজান মাসে রোজ রাখে । আল্লাহপাক মানবজাতিকে সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন । তাই এই মানব জাতি রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহ পাকই নিয়েছেন ।

পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহপাক বলেনঃ

‘হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারো ।’ (সূরা বাকারাঃ১৮৩)

তাই যারা আল্লাহর আদেশ মেনে রোজা রাখে তারা আধ্যাত্বিক ও দৈহিক উপকার অর্জন করতে পারে । রোজা রাখলে ১০টির বেশী দৈহিক উপকার হয় । কারণ রোজা স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্যের অভ্যাস তৈরী করে ।

১. রোজা Detoxification উন্নত করেঃ

Processed খাদ্যে অনেক additive মিশ্রিত থাকে । সেই additive শরীরে চর্বি হিসেবে হিসেবে রূপ নেয় এবং চর্বি হিসেবে জমা হয় । দীর্ঘ রমজান মাসে রোজার কারণে সেই চর্বি দগ্ধ হয় এবং তাতে নিস্বরণ হয় । লিভার, কিডনী এবং অন্যান্য অর্গান এই সম্পন্ন Detoxification করে ।

২.রোজা পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়ঃ

রোজার কারণে সারাদিন যেহেতু পরিপাকতন্ত্রের পরিপাক করতে হয় না এবং কোন পরিপাক এনজাইম ক্ষরণ হয় না এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায় । ইফতারীর পর পুনরায় পুরদমে পরিপাক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে । তাই কাজের মান বেড়ে যায় এবং হজমও ভাল হয় ।

৩. রোজা রক্তচাপ কমায়ঃ

রোজাই একমাত্র পদ্ধতি যা ওষূধ বিহিন রক্তচাপ কমায় । রোজা থাকা কালীন শরীরে জমানো চর্বি দগ্ধ হয় এবং শক্তি সরবরাহ করে । চর্বি কমলে রক্তের ঘনত্ব কমে এবং রক্তচাপও কমে ।

৪. রক্তের সুগার কমায়ঃ

রোজা থাকলে শরীরে জমাকৃত গ্লোকোজ দগ্ধ হয়ে শক্তিতে রপান্তরিত হয় । তাতে ইনসুলিন হরমোন কম নিঃসৃত হয় । Pancreas তাতে বিশ্রাম নিতে পারে । ইফতারের পর কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি, আলু, সবজি ) খেলে Pancreas থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয় এবং ইনসুলিন ভালোভাবে কাজ করতে পারে । তার ফলে ব্লাড সুগার কমে ।

৫. রোজা ওজন কমায়ঃ

রোজা থাকলে অতি তাড়াতাড়ি ওজন কমে । কারণ রোজা থাকলে শরীরে জমাকৃত চর্বি শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । তাতে জমাকৃত চর্বি কমে যায় । তাই ওজনও কমে ।

৬. রোজা স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্যের প্রেরণাঃ

সুন্নত হিসাবে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙা হয় । খেজুর একটি উত্তম স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য । প্রতিটি খেজুরে ৩১ গ্রাম শর্করা, সুগার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি আছে, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী । যেমনঃ পটাশিয়াম হার্টবিট কমায় । তাছাড়া খেজুরে আছে Natural Fibre যা পেটের জন্য খুবই ভালো এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য রোধ করে । এমনিতেই রোজা রাখলে কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়, তাই খেজুর তার প্রতিরোধ করে । তাই এই সুন্নত পালন করে যেমন পূণ্য অর্জন করতে পারি তেমনি সুস্বাস্থ্য ও অর্জন করতে পারি ।

৭. রোজা Inflammation এবং Allergy কমায়ঃ

Rheumatoid Arthritis, Psoriasis ভালো হয় । Healing Process ত্বরান্বিত করে । তাই Inflammatory Bowel Diseases ভাল হয় ।

৮. রোজা নেশা প্রশমিত করেঃ

কেহ ধুমপান করে, কেহ চা বা কফি পান করে । রোজার কারণে এইসব বদ অভ্যাস দূর হয় । যা স্বাস্থ্যর পক্ষে খুবই ভালো ।

৯. রোজা মেদ কমায়ঃ

রোজা রাখলে প্রথমে Energy তৈরী করতে Glucose ব্যবহার হয় । যখন শেষ হয়ে যায়, তখন শরীরে জমাকৃত চর্বি এনার্জি তৈরীতে ব্যবহার হয় । এমনিভাবে চর্বি কমে যায় । তাই রোজা রাখলে কোলেস্টরেল সহ অন্যান্য চর্বি কমে যায় এবং সুস্বাস্হ্যের অধিকারী হওয়া যায় ।

তবে রোজা রেখে ইফতারীর সময় ভাজা-পুড়া ডালের বরা, ছোলা ভাজি খাওয়া ঠিক নয় । তাতে বদ হজম হয় ও ঢেকুর উঠে । তারাবির নামাজে ঢেকুর উঠে এবং অন্য নামাজির বিরক্তির কারণ হতে হয় । রোজার অর্থ এই নয় যে সারাদিন না খেয়ে ইফতারির সময় ২/৩ বেলার খাবার একসাথে খাওয়া । তাই পরিপাকতন্ত্র এই খাবার এক সাথে হজম করতে পারেনা । তাই বদহজম হয় । অতএব ইফতারীর সময় পরিমিত ও স্বাস্হ্য সম্মত খাবার খেতে হবে । তবেই রোজার সুফল পাওয়া যাবে ।

আল্লাহপাক আমাদেরকে রোজা রাখার মাধ্যমে দৈহিক ও আধ্যাত্বিক উন্নতি দান করুন । আমিন ।

আপনার মতামত জানান