রাশেদ খাঁন মেননের ক্যাসিনো গোমর ফাঁস

প্রকাশিত

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এবার অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বলতে শুরু করেছেন বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এবার উঠে এসেছে সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নাম। যিনি প্রতি মাসে সম্রাটের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন। নিয়মিত মাসোহারা না পেলে অকথ্য ভাষায় যুবলীগের নেতাদের গালিগালাজ করতেন তিনি।

জুয়ার টাকায় ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণসহ বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন বর্ষীয়ান এই বামপন্থী নেতা। ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে র‌্যাবের উদ্ধার করা চাঁদাবাজির খাতায় মেননের নাম রয়েছে ৫ নম্বরে।

সূত্র জানায়, রাশেদ খান মেননের শেল্টারেই ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো গড়ে ওঠে। ইয়ংম্যানস ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আরেক বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমদু ভূঁইয়া।

জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা নামধারী অনেকেই সম্রাটের দফতরে হাজির হতেন জুয়ার টাকার ভাগ নিতে। প্রতি মাসে ব্যাগভর্তি করে জুয়ার টাকা নিয়ে তারা বেরিয়ে যেতেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজেও এর প্রমাণ রয়েছে।

তিনি আরো জানান, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে যুবলীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন রাশেদ খান মেনন। খালেদকে আরও বড় পদ-পদবি দেয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে তদবির করেন।

২৮ সেপ্টেম্বর ইয়ংম্যানস ক্লাবে অভিযান চালানোর সময় ক্যাসিনো থেকে আর্থিক সুবিধাভোগীদের নামের একটি লম্বা লিস্ট উদ্ধার করে র‌্যাব। এ তালিকার ৫ নম্বরে নাম আছে রাশেদ খান মেননের। তার নামের পাশে লেখা আছে ১০ লাখ। অর্থাৎ ক্যাসিনো থেকে মাসে রাশেদ খান মেনন ১০ লাখ টাকা পেতেন। অবশ্য ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বারবারই গণমাধ্যমে বলছেন, ক্লাব পরিচালনার সঙ্গে জড়িত থাকলেও ক্যাসিনোর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানান, গত সংসদ নির্বাচনের আগে রাশেদ খান মেনন এককালীন কয়েক কোটি টাকা নেন। পার্টি ফান্ডে নির্বাচনী ডোনেশন হিসেবে এই টাকা নেন তিনি। এছাড়া পোস্টার ছাপানো থেকে শুরু করে নির্বাচনী ক্যাম্প বানানো ও মাইকে প্রচারের সবকিছুই আয়োজন করে দেন সম্রাট। খালেদের মাধ্যমে এসব নির্বাচনী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কিত খরচের বিল দেয়া হতো।

সম্রাট আরও বলেন, তিনি নিজেও ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাশেদ খান মেনন তাকে নির্বাচনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। সম্রাটকে বিশেষ স্নেহ করতেন রাশেদ খান মেনন। রাজনৈতিক মহলে সম্রাটের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই বলতেন ‘সম্রাটের হৃদয় আকাশের মতো উদার। সে একদিন অনেক বড় নেতা হবে’।

সূত্র জানায়, রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদও তথ্য প্রমাণ দিয়ে মেননের চাঁদাবাজির ফিরিস্তি তুলে ধরে। খালেদ জানান, মেনন ভাইকে বিভিন্ন টেন্ডার থেকেও টাকা পয়সা দিতে হত। বড় বড় অনেক ঠিকাদারি কাজের টেন্ডার পাওয়ার পর ৫ পার্সেন্ট হারেও কমিশন নিয়েছেন মেনন। জিকে শামীমের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে বামপন্থী নেতা রাশেদ খান মেননের নাম উঠে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ক্যাসিনোর সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন তাদের সবাইকেই আইনের মুখোমুখি করা হবে। সেক্ষেত্রে কে বাম নেতা বা কে ডানপন্থী নেতা তা আমাদের বিবেচ্য নয়।

আপনার মতামত জানান