যেভাবে রমজান মাসে সৌভাগ্যবান হবেন

প্রকাশিত

প্রতিবছর সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় পবিত্র মাস মাহে রমজান। পবিত্র এই মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন তার জীবনকে পাপমুক্ত করার চেষ্টা করে। সংযত ও ইবাদতময় জীবনাচারের মাধ্যমে পুণ্যময় জীবন গড়ার অনুশীলন করে। আল্লাহর কালাম পবিত্র কোরআনের চর্চার মাধ্যমে জীবনকে আলোকিত করে।

পবিত্র এই মাসে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য সৌভাগ্যের দ্বার খুলে দেন। যারা এই মাসের মহামূল্যবান মুহূর্তগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের রাজকীয় সংবর্ধনার সুসংবাদ। নিম্নে পবিত্র মাহে রমজানের সৌভাগ্যের দ্বার অতিক্রম করার আমলগুলো সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো—

গুরুত্বসহকারে রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমজানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া : আমর ইবনু সাঈদ ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি উসমান (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তিনি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের যখন কোনো ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হয় আর সে উত্তমরূপে নামাজের অজু করে, নামাজের নিয়ম ও রুকুকে উত্তমরূপে আদায় করে, তাহলে যতক্ষণ না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হবে তার এই নামাজ তার পেছনের সব গুনাহর জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান। (মুসলিম, হাদিস : ৪৩১)

রাত জেগে ইবাদত করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭)

কারো কারো মতে এখানে রাত জেগে ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য তারাবির নামাজ।

রমজানে অধিক পরিমাণে সদকা করা : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। তাঁর দানশীলতা বহুগুণ বর্ধিত হতো রমজানের পবিত্র দিনে যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কোরআনের সবক দিতেন। রাসুল (সা.) কল্যাণ বণ্টনে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৪)

রোজাদারকে ইফতার করানো : জায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পায়। কিন্তু এর ফলে রোজাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা : আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবুল করুন। কোরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’ (শুআবুল ঈমান : ১৮৩৯)

শেষ দশকের ইবাদতে জোর দেওয়া : আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুল (সা.) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করা : কারণ পবিত্র এই মাসে একটি সৌভাগ্যের রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর আপনি কি জানেন কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতার রুহ [জিবরাইল (আ.)] অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

তাই সৌভাগ্যবানদের কাতারে জায়গা করে নিতে রাসুল (সা.) এই রাতের সন্ধান করার ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ করা : কারণ পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালনে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের ওমরাহ (সওয়াবের ক্ষেত্রে) হজের সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৯১)

ইতিকাফ করা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। (বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

দোয়া, জিকির ও ইস্তিগফারে মগ্ন থাকা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এ জন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো জিনিস নেই।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৯)

তাই রমজানে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হতে বেশি বেশি দোয়া-জিকিরে সময় কাটানো আবশ্যক। মহান আল্লাহ সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে রমজানের সৌভাগ্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান