মেয়র জাহাঙ্গীরের বহিষ্কার, যা বললেন ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত

ওবায়দুল কাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে দলটির গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত ইস্যুতে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা শেষে রাতে আসাদ গেট সংলগ্ন সংসদ ভবন গেটে এ কথা জানান তিনি।

গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। যদিও মেয়র দাবি করেছিলেন, তাঁর আলাদা আলাদা বক্তব্যকে একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গত ৩ অক্টোবর তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর সেই নোটিশের জবাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় কথা হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার কারণ দর্শাও নোটিশের জবাবে আমাদের পার্টির সভাপতি বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছে।

কাদের বলেন, সেটা আমি পড়ে শুনিয়েছি। গোটা হাউস শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে মতামত দিয়েছে এবং আমাদের সভাপতি সবার মতামত নিয়ে সবাই একবাক্যে তাঁর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানায়। সে প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলমকে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তো বটেই এ ছাড়া তাকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কার হলে সে ক্ষেত্রে স্থায়ী/অস্থায়ীর প্রশ্ন থাকে না। বহিষ্কার, বহিষ্কারই বলে জানান তিনি।

আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে কাদের বলেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। যেহেতু আমাদের সভার যে প্রস্তাব এটা তো বঙ্গবন্ধু, আমাদের ইতিহাসকে কটাক্ষ করে বক্তব্য এটার পক্ষে কোনোভাবেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখানে যে আজকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে প্রেক্ষিতে সেটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অফিশিয়ালি জানানো হবে।

৪ মিনিট ৪ সেকেন্ডের এ ভিডিওর শুরুতে দেখা যায় তিনি চেয়ারে বসে কথা বলছেন। পাশ থেকে তা গোপনে ধারণ করা হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড পরে ভিডিওতে জাহাঙ্গীরের ছবি দেখা যায়নি। শুধু কথা শোনা যায়। সেখানে জাহাঙ্গীরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু ৩০ লাখ (মুক্তিযোদ্ধা) মারাইছে। ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার করে মরেছে প্রতি জেলায়। তাঁর স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে।’

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বৈঠকের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কার সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেই সময় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘আমাকে এখনো পার্টি থেকে জানানো হয়নি। আমি কোন কাগজও পাইনি।’ পরে রাতে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে জানান। তারপরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

বক্তব্য সুপার এডিটেড দাবি করেছিলেন, যাচাই-বাছাই করেছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মিটিং তো অনেক দিন পরে হয়েছে কাজেই আমাদের পার্টি, আমাদের পার্টির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই বিষয়টি ভালোভাবেই খোঁজ-খবর নিয়েই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

গাজীপুরের পুরো কমিটি থাকবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজনের জন্য কী পুরো কমিটি ভেঙে যায় না কী?

আওয়ামী লীগের বৈঠকে দেশে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সহিংসতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নির্বাচন সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিলেন এবং বিদ্রোহীদের যারা মদদদাতা ছিল তাদের সম্পর্কেও রিপোর্ট দিয়েছে। লিখিত রিপোর্ট এবং তারা নিজেরা মৌখিকভাবেও যার যার এলাকায় কতটা আসন পেল, কতজন বিদ্রোহী হলো, কারা কারা মদদ দিল এ রকম অনেক নাম এসেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কাগজপত্র দেখে যেটা সিদ্ধান্ত সেটা হচ্ছে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত আগে ছিল সেটা তো থাকবেই। কিন্তু বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছে তারা নেতা হলে কোন জেলার নেতা, উপজেলার নেতা তাদেরকেও শাস্তি পেতে হবে। তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। এমন কী জনপ্রতিনিধি হলে, মন্ত্রী হোক, এমপি হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘হয়তো কোনো বিশেষ বিশেষ এলাকা হতে পারে বিশেষ কারণে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ওপেন করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে এবং এই সহিংসতার বিষয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) কথা বলেছেন। পাশাপাশি এটাও সত্য এবারকার ইউপি নির্বাচনে যে একটা বিষয় মাহবুব তালুকদার বলে আসছিল যে ভোটারদের অনাগ্রহ এখানে ৭০ থেকে ৭৩ পার্সেন্ট ভোটাররা উপস্থিত হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি ভোটের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে অতীতের চেয়ে। এটা প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতার উপাদান যুক্ত হয়েছে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ করে মন্ত্রীকে বিশেষভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে আরও কঠোর হতে। যাতে এ ধরনের অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সভানেত্রীর নির্দেশে চিঠি না দেওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে নতুন সদস্য বলতে পারব না। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হলেও সাধারণ সম্পাদকের চিঠি যাবে সভানেত্রীর নির্দেশে। সেটা যাওয়ার আগে আমি বলছি না।’

আপনার মতামত জানান